Pi Fingers Motivation

শৈশব থেকেই যিনি প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন | বারাক হুসেইন ওবামা

Author:

Published:

Updated:

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা

Affiliate Disclaimer

As an affiliate, we may earn a commission from qualifying purchases. We get commissions for purchases made through links on this website from Amazon and other third parties.

বারাক হুসেইন ওবামা আমেরিকার ৪৪তম রাষ্ট্রপতি । বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে একজন তিনি । জন্ম ১৯৬১ সালের ৪ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের হনুলুলু শহরের কুইন্স মেডিক্যাল সেন্টারে৷

     বড্ড আদুরে ছিলেন তিনি ৷ তাই ব্যারি, বামা, রক, ‘কেনিয়াপুত্র’….আদুরে নামেরও যেন শেষ নেই তাঁর !

আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় বড় হয়ে আমরা একেকজন কি হতে চাই? তাহলে স্বভাবতই কেউ বলব ডাক্তার, কেউ বলব ইঞ্জিনিয়ার কেউবা বলব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এরকমটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ যদি বলে ‘আমি বড় হয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চাই’ তাহলে সবাই ভ্রু কুচকাবেন।

বারাক ওবাম ঘোষণা করলেন, ‘ইয়েস উই ক্যান। চেঞ্জ হ্যাজ কাম’

আসলে ভ্রু কুচকানোর কিছু নেই। কেউ যদি ছোটবেলা থেকে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে এবং সেই মোতাবেক এগিয়ে যায় তাহলে সেই লক্ষ্যের দেখা সে একদিন পাবেই পাবেই। বিশ্বাস না হলে বারাক ওবামার জীবনদর্শন দেখতে পারেন।

ওবামা তখন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পড়তেন। ক্লাসে একদিন তাদের শিক্ষক ‘ইস ডারমাওয়ান’ শিক্ষার্থীদের নিজের জীবনের লক্ষ্য উল্লেখ করে একটি রচনা লিখতে বললেন। রচনা লেখা শেষে ‘ইস ডারমাওয়ান’ এক এক করে সবার খাতা দেখতে শুরু করলেন।

খাতা দেখতে দেখতে একসময় এসে তিনি চমকে উঠলেন। কারণ ‘ব্যারি’ নামের একটি ছেলে লিখেছে সে বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চায়। বারাক ওবামার ডাক নাম ‘ব্যারি’। অনেকে ভাবতে পারেন ছোট্ট বয়সে হয়তোবা মনের খেয়ালেই এরকমটি লিখেছিলেন ওবামা।

কিন্তু এর ঠিক তিন বছর পর ওবামা যখন একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি হন তখনও তাকে এরকম একটি রচনা লিখতে হয়। সেই রচনাতেও লিখেন তিনি বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চান। সেদিনের শিক্ষিকা ‘ক্যাটরিনা সিনাগা’র আজও মনে আছে সেই দিনের কথা।

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ যেটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটি আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্য এবং এর রাজধানী হনলুলু। ওবামার বাবার বসবাস ছিল কেনিয়ার একটি অজপাড়া গ্রামে। সেখান থেকে সিনিয়র বারাক হুসেন ওবামা পড়ালেখা করতে আসেন ‘হনলুলু বিশ্ববিদ্যালয়ে’।

অপরদিকে আমেরিকার কানসাস থেকে জীবিকার সন্ধানে শ্বেতাঙ্গ ‘ড্যানহাম’ পরিবার আসে হনলুলুতে। এই পরিবারেই ‘স্ট্যান অ্যান ড্যানহাম’ নামে একটি মেয়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনাচক্রে সিনিয়র ওবামার সাথে পরিচয় হয় স্ট্যান অ্যান ড্যানহাম এর। এই পরিচয় একসময় প্রেমে রূপান্তরিত হয়। তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

কিন্তু সেসময় হনলুলু রাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ বিয়ে অবৈধ ছিল। আমেরিকার আরও অনেক রাজ্যে এরকমটি ছিল। কিন্তু রাজ্যের নিষেধ তাদের ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে নি। সকল বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা দুজন বিয়ে করেন।

৪ আগস্ট, ১৯৬১ সাল। সিনিয়র বারাক ওবামা ও স্ট্যান অ্যান ড্যানহাম এর ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে জুনিয়র বারাক ওবামা। জন্মের সময় বাবা-মা শখ করে ছেলের নাম রাখেন বারাক হুসেন ওবামা। বারাক শব্দের অর্থ ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’। আর ডাক নাম ছিল ‘ব্যারি’।

বাবা-মায়ের আদরে ভালোভাবেই কাটছিল ব্যারির শৈশবের দিনগুলো। কিন্তু পৃথিবীর হালচাল বুঝে ওঠার আগেই ছন্দপতন ঘটে তার জীবনের। ব্যারির বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। এর আগে অবশ্য তারা অনেকদিন আলাদাভাবেই থাকতেন। বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর মায়ের কাছেই থেকে যান ব্যারি।

ডিভোর্সের কিছুদিন পর ব্যারির মা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দোনেশিয়ান এক ছাত্রকে বিয়ে করেন। তার নাম ছিল ‘লোলো সোয়েটরো’। ১৯৬৭ সালে ব্যারি তাদের সাথে জাকার্তায় চলে আসেন। সে সময় ব্যারির বয়স ছিল ৬ বছর। এ সময় ব্যারির নামের পরিধিটা একটু বেড়ে যায়। নতুন বাবার নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখা হয় ‘ব্যারি সোয়েটরো’।

মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছুই শিখে ফেলেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
Barack Obama with his mother at the Punahou | by U.S. Embassy Jakarta, Indonesia

ব্যারিদের বসবাস ছিল জাকার্তার শহরতলীতে। এই স্থানটিতে নিম্ন মধ্যবিত্তদেরই বসবাস ছিল। রাস্তাঘাট ছিল মাটির, চারপাশটা ছিল গাছগাছালিতে ঘেরা এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল জলাশয়। এইরকম এক পরিবেশেই বড় হতে থাকেন ব্যারি। এখানকারই একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় ব্যারিকে।

ব্যারির মা পড়াশোনার বিষয়ে খুবই সিরিয়াস ছিলেন। তবে মা ছেলের মধ্যে এমনিতে খুব সখ্য ছিল। এমন অনেক রাত গেছে যে রাতে মা-ছেলে চাঁদের আলো দেখতে দেখতে রাত পাড় করে দিয়েছেন।

আমেরিকা থেকে সোজা জাকার্তা। নতুন এক দেশ, নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি সবই ব্যারির কাছে নতুন। নতুন এই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে খুব বেশি সময় নেননি ছোট্ট ব্যারি। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছুই শিখে ফেলেছিলেন।

জাকার্তায় ব্যারির একটু সমস্যা ছিল। গায়ের রং কালো হওয়ায় তার সমবয়সী ছেলেদের উত্যক্ত সহ্য করতে হয়েছিল। এজন্য ব্যারির খুব মন খারাপ হতো। কিন্তু একদিন সেই বন্ধুদেরই নয়নের মনি হয়ে উঠলেন ব্যারি। কিন্তু কীভাবে?

ব্যারি ও তার বন্ধুরা পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলছিলেন। তাদের এই খেলার মাঝে হঠাৎ করে বাগড়া বাঁধায় অন্য পাড়ার কিছু ছেলে। ছেলেগুলো ছিল খুবই দুষ্ট স্বভাবের। তাই কেউ সাহস করে তাদেরকে কিছু বলতে পারছিলো না। মুখে কিছু বলতে না পারলেও রাগে গজগজ করছিল ব্যারি। রাগে গজগজ করতে করতেই মাঠ থেকে বাড়িতে চলে যায় ব্যারি। সবাই ভাবে ভয় পেয়ে সে চলে গেছে।

কিন্তু কিছুক্ষণ পর ব্যারি আবার মাঠে ফিরে আসে এবং সাথে করে নিয়ে আসে একটি পোষা কুমিরের বাচ্চা। এই কুমিরের বাচ্চা দিয়ে সেই দুষ্টু ছেলেদের তাড়া করে। ছেলেগুলো তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায়। এরপর আর কোনোদিন সেই ছেলেগুলো এই পাড়ায় আসেনি। এই ঘটনার পর ব্যারির সেই বন্ধুরা তাকে আর খেপায় না। তারা তাকে নয়নের মনি করে রাখে।

বাবার এমন মৃত্যু আমার কাছে আজও রহস্যময়।

জীবনের চারটি বছর জাকার্তায় কাটানোর পর আবার পরিবর্তন করতে হয় আবাসস্থল। সময়টা ছিল ১৯৭১ সাল। সেসময় ব্যারির বয়স ছিল ১০ বছর। বাবা-মা কে ছেড়ে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে চলে আসেন ব্যারি। এখানে এসে নানা-নানীর কাছে থাকেন। নানী ‘ম্যাডেলিন ড্যানহ্যাম’ ছিলেন ব্যারির প্রিয় ব্যক্তিত্ব।

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
বারাক ওবামা

ব্যারির সাথে হনলুলুতে একদিন তার বাবা বারাক হুসেন ওবামা সিনিয়রের দেখা হয়। এই দেখাই ছিল তাদের শেষ দেখা। এরপর ব্যারির বাবা হনলুলু ছেড়ে চলে যায়। ১৯৮২ সালে বারাক হুসেন ওবামা সিনিয়ন এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। 

ওবামার বাবার শেষ জীবন ছিল ট্র্যাজেডিতে ভরা। সেই ট্র্যাজেডি সম্পর্কে ওবামা বলেন, ‘এটা ছিল ১৯৮১ সালের কথা। আমার বয়স তখন ২১ বছর। এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা তার দুই পা হারান। তার চাকরি চলে যায়। তিনি বন্দি হয়ে পড়েন হুইল চেয়ারে। ১৯৮২ সালে নাইরোবির রাস্তায় তিনি আবার সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই দুর্ঘটনায় নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। বাবার এমন মৃত্যু আমার কাছে আজও রহস্যময়।’

জাকার্তা থেকে হনলুলুতে এসে এখানকার পুনাহো স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় ব্যারিকে। এই স্কুল থেকেই ১৯৭৯ সালে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ব্যারি। কিন্তু এই স্কুলজীবনে তাকে অনেক বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
বারাক ওবামা

স্কুলের পাঠ চুকিয়ে এবার কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য হনলুলু ছেড়ে চলে আসেন লস এঞ্জেলস। সেখানকার অক্সিডেন্টাল কলেজে ভর্তি হয়ে দুই বছর পড়ার পর সেখান থেকে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি হয়ে যান। এখানেই তার জীবনের বিরাট এক ঘটনা ঘটে। কিন্তু কী ঘটনা? এ বিষয়ে পরে বলছি। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন ব্যারি।

ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করার পর কিছুদিন বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনে এবং নিউ ইয়র্ক পাবলিক ইন্টারেস্ট রিসার্চ গ্রুপ নামের দুটো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ব্যারি। কিন্তু মন না টেকায় সেখান থেকে চলে যান শিকাগোতে। সেখানে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে তিন বছর কাজ করেন।

ব্যারির বাবা সিনিয়র ওবামা ছিলেন কেনিয়ার অধিবাসী। ১৯৮৮ সালে ব্যারি তার পিতৃভূমি কেনিয়ায় যান। সেখানে তার অনেক আত্মীয়ের সাথে তার দেখা হয়।

পিতৃভূমি থেকে ফিরে এসে হার্ভাড ল কলেজে ভর্তি হন। বছর শেষে চারপাশ থেকে সাফল্য তাকে ঘিরে ধরে। যার ফলশ্রুতিস্বরূপ হার্ভাড ল রিভিউয়ের সম্পাদক নির্বাচিত হন ব্যারি। এর ঠিক দুই বছর পর সম্পাদক থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এটি ছিল তার জন্য বিশাল এক মাইলফলক। কারণ ল রিভিউয়ের ১০৪ বছরের ইতিহাসে ওবামাই হলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ছোটবেলার সেই ইচ্ছার প্রাথমিক রূপ ধরা দিয়েছে। এবার পূর্ণরূপ ধরার পালা। ১৯৯১ সালে হার্ভাড ল’ কলেজ থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি নিয়ে ওবামা শিকাগো শহরে ফিরে আসেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ওবামার সাথে পরিচয় হয় মিশেল রবিনসন এর। দীর্ঘদিন প্রেম ভালোবাসার পর ১৯৯২ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের সংসারে রয়েছে দুই মেয়ে। তাদের একজন মালিয়া অ্যান ওবামা (জন্ম ১৯৯৯) এবং আরেকজন নাতাশা ওবামা সাশা (জন্ম ২০০১)।

উদারনৈতিক আমেরিকা বা রক্ষণশীল আমেরিকা বলে কোন কথা নেই। আমরা জানি আমেরিকা একটাই আর সেটা হলো ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা।

ওবামা তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’স্কুলে লেকচারার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সময়টা ছিল ১৯৯৫ সাল। এসময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওবামার মা। বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে ওবামা একেবারে একা হয়ে যান কিন্তু দিশেহারা হননি।

অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে সে ১৯৯৬ সালে ইলিনয়ের সিনেটর নির্বাচিত হন ওবামা। একইভাবে ১৯৯৮ এবং ২০০২ সালেও তিনি পূণর্বার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালে তার ঝুলিতে জমা হয় আরেকটি সাফল্য। সে বছর বোস্টনে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে এক বক্তৃতা দেন তিনি।  

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
বারাক ওবামা

সেই ভাষণে সে মার্কিন অর্থনীতি ও সামাজিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পাল্টানোর কথা এবং ইরাক যুদ্ধে বুশ প্রশাসনের ঘৃণ্য ভূমিকার কথা বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন, “উদারনৈতিক আমেরিকা বা রক্ষণশীল আমেরিকা বলে কোন কথা নেই। আমরা জানি আমেরিকা একটাই আর সেটা হলো ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা।” তার এই যুগান্তকারী ভাষণের কারণেই সেদিন জাতীয় এক ব্যক্তিত্ব বনে যায় ওবামা।

এরপর ২০০৪ সালে আমেরিকার সিনেট নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওবামা ৭০% ভোট নিয়ে জিতে যান। এ জয়ের পেছনে তার ২০০৪ সালের বোস্টনের ভাষণের প্রভাব আছে বলে অনেকেই মনে করেন।

সেই বর্ণবিদ্বেষী সমাজের মানুষের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
বারাক ওবামা

২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তার বেষ্ট সেলার মর্যাদা পাওয়া বই ‘অডাসিটি অব হোপ’। এরপর ২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান ডেমোক্রেটিক দল থেকে। তারপর এলো ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক ৪ নভেম্বর। সেদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপক্ষ রিপাবলিক দলের পদপার্র্থী জন ম্যাককেইনকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হন বারাক ওবামা। সেই সাথে সে হয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের মহানায়ক।

যারা তাকে ভোট দেননি তাদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদেরও প্রেসিডেন্ট হব।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বারাক ওবামা তার নিজ শহর শিকাগোর গ্রান্ট পার্কে যে ভাষণ দেন, তা ছিল এক অসাধারণ বিজয়-ভাষণ। ২০০৮ সালে নভেম্বরের ৪ তারিখ রাতে দেয়া ওই ভাষণের প্রত্যক্ষ শ্রোতা ছিল প্রায় আড়াই লাখ। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে টিভি, ইন্টারনেট ও রেডিওতে তা দেখেছেন-শুনেছেন কোটি কোটি মানুষ।

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
বারাক ওবামা

তিনি ঘোষণা করলেন, ‘ইয়েস উই ক্যান। চেঞ্জ হ্যাজ কাম’। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত একজন অশ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামার সেই সাড়া জাগানো ভাষণে আলোচিত হয় যুক্তরাষ্ট্র আর বিশ্বের তখনকার মূল সমস্যাগুলো। তিনি রিপাবলিকান ভোটার যারা তাকে ভোট দেননি তাদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদেরও প্রেসিডেন্ট হব।

এই ছিল ব্যারি থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা হওয়ার গল্প । তিনি ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসরে যান ।

সে অনেক দিন আগের কথা। প্রায় চারশত বছর। বারাক ওবামাদের পূর্ব পুরুষরা এসেছিলেন আমেরিকাতে। সে সময় তারা আমেরিকানদের দাসত্ব করতেন। শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবিদ্বেষের কারণে তাদের চরম অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, আজ সেই বর্ণবিদ্বেষী সমাজের মানুষের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা
বারাক ওবামা

স্কুল জীবনেই যার লক্ষ্য ছিল বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হবে সে তার লক্ষ্য অর্জন করে দেখিয়েছেন। এই লক্ষ্য সে কীভাবে অর্জন করলো তা তো সকলেরই জানা। অনেক চড়াই-উৎরাই ও ত্যাগের মাধ্যমে সে তার লক্ষ্য অর্জন করেছেন। মানুষের একান্ত চেষ্টা, ইচ্ছা থাকলে পৃথিবীতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন । অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, সফলতার সূত্র এবং জীবনের নানান সমস্যা আপনাদের পাশে আছে পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন ।

আর আগামী পর্বে আপনি কোন বিষয়ে লেখা চান কমেন্ট করে জানান । ভাল থাকুন ।

সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।  

About the author

Latest posts

  • জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা অনেকেই মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসবুকের গল্প জানি । একটি ছোট্ট রুম থেকে সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে সকল ভাষাভাষী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসকে বদলে দিয়েছে ফেসবুক । কি ভাবে মার্ক জাকারবার্গ করলেন এটা ? আপনি কি জানেন জাকারবার্গকে তার স্বপ্নের জন্য কি কি ত্যাগ করতে…

    Read more

  • বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    ডিসকভারি চ্যানেলে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি দেখেননি এমন লোক কমই পাওয়া যাবে । অনুষ্ঠানটি যার কারণে সারা বিশ্বে এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে তিনি হচ্ছেন এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস (Bear Grylls) । সবার কাছে বিয়ার গ্রিলস নামেই পরিচিত। তিনি একাধারে একজন লেখক, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, সাবেক সেনা কমান্ডো ও বর্তমানে বিশ্ব স্কাউট সংস্থার চীফ অব স্কাউট ।…

    Read more

  • সেরা নেতৃত্বের জন্য নেলসন ম্যান্ডেলার ১০ টি  উক্তি

    সেরা নেতৃত্বের জন্য নেলসন ম্যান্ডেলার ১০ টি উক্তি

    নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণ ভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।  আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরি প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মত উদারতা এবং তাঁর বর্ণাঢ্য ও নাটকীয় জীবন কাহিনী—এসব মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তী । আব্রাহাম…

    Read more