কিভাবে অলসতা দূর করবেন ? অলসতা দূর করার উপায় কি- জানতে নিচের লিখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সাথে নিচে সংযুক্ত ভিডিওটিও দেখুন ।
অলসতা কি?
অলসতা হচ্ছে কর্মহীন থাকার ইচ্ছা, কোনকিছুই করতে না চাওয়া এবং নিরুৎসাহিত থাকা । এক প্রকার নিস্ক্রিয় থাকার ইচ্ছার নাম অলসতা ।
অলসতা দূর করার উপায় পড়তে এসে অলসতা করে না পড়েই চলে গেলে কিন্তু হবে না !
মাঝেমধ্যে টানা অনেক ঘণ্টা কাজ করার পর সামান্য অলসতা এলে সেটা বরং উপভোগ্য অথবা প্রচণ্ড শীতের মাঝে বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না, এমন কিছু হলেও সেটাকে গুরুতর কিছু না ভাবাই ভাল ।
কিন্তু এটা একটা মারাত্মক রোগ হয়ে দাঁড়ায় যখন, উঠতে, বসতে, কাজ করতে গেলে অলসতা এসে আপনার স্বাভাবিক গতিকে থামিয়ে দেয় । যদি খুব বেশি এমনটা হয়, তাহলে বুঝবেন আপনি অলসতায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন । যত দ্রুত সম্ভব এর থেকে আপনাকে বের হয়ে আসতে হবে ।
আপনি বলবেন, আমি যা চাই, তাই করি অথবা করতে পারি ।
আমাদের প্রতিদিনের কাজ অথবা কোন কিছু খুব যত্ন নিয়ে দক্ষতার সাথে করতে চাইলে, এমন কি একটি সুন্দর ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সবার আগে জানতে হবে, কীভাবে অলসতার ব্যধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায় । একজন সফল মানুষের সফলতার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধাটার নাম অলসতাকে জয় করা ।
পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন থেকে আজকে জানাবো অলসতাকে দূর করার উপায় এবং কিভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে সফল করা যেতে পারে ।
অলসতা দূর করার অসাধারণ কিছু টিপস, যা আপনাকে অনেক বেশি দক্ষ ও পরিশ্রমী করে তুলবে ।
১. একটি কাজকে ছোটছোট অনেকগুলো অংশে ভাগ করে নিন
আমরা অনেক সময় বেশ বড় ও জটিল কোন কাজ হলেই ঘাবড়ে যাই । এই কাজটি করতে গেলে অনেক সময় লাগবে, বেশ পরিশ্রমের কাজ- এমন ভাবনা থেকে কাজ করার ইচ্ছাটা চলে যেতে থাকে । কিংবা কিছুদিন কাজটি চালিয়ে যাবার পর একপর্যায়ে ছেড়ে দেই । এমন ক্ষেত্রে সহজেই আপনি সমস্যাটিকে সমাধান করতে পারেন ।
এক্ষেত্রে আপনার কাজটিকে ছোট ছোট অনেকগুলো ইউনিটে ভাগ করে নিন । প্রতিটি কাজের জন্য প্রয়োজন বুঝে সময় নির্ধারণ করুন । এর ফলে যেটা হবে আপনি যখন ছোট একটি অংশের কাজ করতে যাবেন তখন পুরো কাজের চাপটি একসাথে আপনার মাথায় নেওয়ার প্রয়োজন নেই ।
আপনি খুব সহজেই, অল্প পরিশ্রমের মাধ্যমে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত প্রতিটি অংশের কাজ করে ফেলতে পারেন । আপনার কাছে তখন কাজটি আর আগের মতো জটিল কিংবা সময় সাপেক্ষ মনে হবে না । চাপমুক্তভাবে আপনি কাজটি চালিয়ে যেতে পারছেন । এর ফলে কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ বেড়ে যাবে । অলসতা ও অনীহা দূর হবে ।
২. বিশ্রাম, ঘুম এবং ব্যায়াম
অনেক সময় কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়ার কারণ- শারীরিক দুর্বলতা, অনিদ্রা, অথবা দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি । যদি মনে করেন উপরের কারণগুলোর জন্যই কাজের প্রতি আপনি মনোযোগ রাখতে পারছেন না, তাহলে আপনার উচিত প্রথমেই বিশ্রাম নেওয়া । পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন । বিশ্রামকালীন এই সময়টাতে ব্যায়াম করুন । পারলে শরীরে প্রকৃতির মুক্ত বাতাস দিন । আপনি অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবেন । কাজে আনন্দ ফিরে পাবেন ।
৩. অনুপ্রেরণা
অনেক ক্ষেত্রে অলসতার মুল কারণ থাকে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব । নিজেকে জাগাতে আপনি বিখ্যাত মানুষদের জীবনী, তাদের সফলতার গল্প, মনিষীদের বানী বা তাদের জীবন দর্শন জানুন । অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো ।
তাছাড়া আপনি যে কাজটি করতে যাচ্ছেন তার গুরুত্ব নিয়ে ভাবুন । খুব পজেটিভলি ব্যাখ্যা করুন যে, কাজটি শেষ করলে আপনি কি কি সুবিধা পাচ্ছেন । কতটা ভূমিকা রাখতে পারে এই কাজের সাফল্য ।
এভাবেই আপনি কাজের প্রতি নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখতে পারেন । এর ফলে নিশ্চিতভাবে আপনার অলসতা অনেকটাই কমে যাবে ।
অলসতা দূর করুন আজই, না হলে অলসতা আপনাকে অক্টোপাসের মতো করে জড়িয়ে ধরবে ।
৪.আপনি যা হতে চান অথবা যা করতে চান তার একটা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক করুন
আপনি যা হতে চান তা নিয়ে একটি পরিষ্কার ছক তৈরি করে ফেলুন । যেন চোখ বন্ধ করলেই, আপনার সামনে ছবির মতো করে পুরো ব্যাপারটি ঘটতে দেখেন । আপনি যা অর্জন করতে চান সেটা নিয়ে কল্পনায় একটা ঘটনা তৈরি করুন ।
অথবা যেমন করে আপনি জীবন যাপন করতে চান সেটা নিয়ে খুব সুন্দর ও গোছানো একটি স্বপ্ন দেখুন । আপনার এই কাল্পনিক ভাবনাগুলো নিয়ে সুযোগ পেলেই সব সময় ভাবতে থাকুন । এগুলো আপনাকে অনেক বেশি উদ্যমী করে তুলবে । ফলে, অলসতার জায়গা হবে না আপনার প্রতিদিনের কাজ কর্মে ।
৫. সুবিধা নিয়ে ভাবুন
আমাদের সবার একটা কমন সমস্যা হচ্ছে কোন কাজ করতে গেলে তার ভালটা নিয়ে ভাবার আগেই খারাপ চিন্তাগুলো আগে মাথায় নিয়ে নেই । আপনি যদি পড়ে যাওয়ার ভয়ে সাইকেল চালানোর সাহস না করতেন তাহলে আপনি সাইকেল চালানোটা শিখতে পারতেন না ।
আপনি যা অর্জন করতে চান সেটা নিয়ে কল্পনায় একটা ঘটনা তৈরি করুন ।
তাই যে কাজটি করতে চাইছেন তার সমস্যা অথবা জটিলতা নিয়ে না ভেবে, ভাবুন যে অলসতাকে জয় করে আপনি যদি কাজটি ঠিকমতো করে ফেলতে পারেন, তাহলে আপনি কি কি পাচ্ছেন? সমস্যা নিয়ে ভাবলে কখনো কাজ এগোবে না, বরং নিরুৎসাহিত হয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন আপনি । অলসতা আপনাকে অক্টোপাসের মতো করে জড়িয়ে ধরবে ।
৬. ফলাফল নিয়ে ভাবুন
আপনি যদি অলসতা করে কাজটি সময়মত ঠিকভাবে না করতে পারেন তার পরিনাম কি হতে পারে । এর ফলে আপনি কতটা পিছিয়ে যাচ্ছেন, আপনার কতটা ক্ষতি হচ্ছে, কি ঘটতে যাচ্ছে- এসব পরিণামের কথা ভাবুন ।
আপনি যদি কাজের ব্যর্থতার অনুতাপ এখনই অনুভব করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত, সময় থাকতে আপনি সময়ের অপব্যবহার কোনভাবেই করতে চাইবেন না ।
এই চিন্তা আপনাকে কাজের প্রতি আরও আগ্রহী করবে, আপনি প্রচণ্ড প্রভাবিত হবেন কাজটি শেষ করতে । আপনার অলসতা দৌড়ে পালাবে ।
৭.একবারে একটি কাজই করুন
একবারে একাধিক কাজ না করাটাই ভাল । তারচেয়ে আপনি যদি একটি একটি করে কাজে মনোযোগী হন, তাহলে চাপমুক্ত ভাবে কাজটি শেষ করতে পারবেন । অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে গেলে এলোমেলো হয়ে কাজের চাপে পড়ে মনোযোগ হারানোর ভাল সম্ভাবনা থাকে ।
এতে আপনি অলসতাকে কি জয় করবেন, অলসতাই আপনাকে জয় করে বসবে । অন্যদিকে একটি করে কাজ শেষ করলে আপনি যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে, যত্ন সহকারে কাজটি শেষ করতে পারবেন । তাই বলছি, একবারে একটি কাজই করুন । একাধিক নয় ।
৮.কল্পনা
মন, অভ্যাস ও কাজের ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রভাব থাকে কল্পনাশক্তির । আত্মবিশ্বাস আসে এমন এক শক্তি থেকে যেন আপনি আপনার সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন । এমন অবস্থায় আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারবেন, কাজটি করার জন্য সেই শক্তি অথবা প্রেরনা আমার আছে ।
দীর্ঘসূত্রিতা অলসতা তৈরির অন্যতম একটি কারণ ।
আপনি বলবেন, আমি যা চাই, তাই করি অথবা করতে পারি । কোন কাজ করার আগে তাই ভাবুন, খুব সহজে, প্রচণ্ড উদ্যোম আর আনন্দে কাজটি করে যাচ্ছেন আপনি । এটা বিশেষভাবে কাজে লাগবে যখন আপনি অলসতা অনুভব করবেন তখন । অথবা আপনি যেটা করতে চাইছেন আপনার মন সেটা করতে দিতে চাইছে না- এমন অবস্থায় ।
৯. কাজকে অনুশীলন হিসেবে ভাবুন
প্রতিটি কাজকে আপনার অনুশীলন হিসেবে বিবেচনা করুন । নিজের ভেতর এই বিশ্বাস তৈরি করুন যে এর ফলে আপনি আরও দক্ষ হয়ে উঠছেন । আপনার জ্ঞান ও পারদর্শীটা বাড়ছে । আপনি নিজেকে আরও শক্তিশালী হিসেবে প্রস্তুত করছেন এই কাজের মাধ্যমে । এই ভাবনাগুলো আপনাকে আগের চেয়েও দৃঢ়সংকল্প এবং অনেক বেশি নিশ্চিত হতে শেখাবে । অলসতাকে প্রশ্রয় দেবে না এমন ভাবনা ।
১০. দীর্ঘসূত্রিতা
কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করুন । দীর্ঘসূত্রিতা অলসতা তৈরির অন্যতম একটি কারণ । যদি আপনার সত্যি কিছু করার থাকে, তাহলে এখনি কেন শুরু করছেন না? কেন আপনি সেটা নিয়ে নেই? কেন আপনি আপনার পরিকল্পনাকে শুধু মাথায় নিয়ে বসে আছেন?
আপনার অলসতা দূর করার এখনি সময় । কাজে নেমে যান, ঝাপিয়ে পড়ুন । জেনে রাখবেন, দীর্ঘসূত্রিতার অপর নাম অলসতা ।
১১.সফল লোকদের থেকে শিখুন
সফল মানুষদের দেখুন, কীভাবে তারা অলসতাকে দূর করেছে । তাদের কাছে শিখুন, তাদের সাথে কথা বলুন এবং তাদের সাথে কাজ করুন । অলসতাকে জয় করতে হলে হলে প্রতিদিনের কাজে ধারাবাহিক নিয়ম মেনে চলুন । নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে আপনি সতর্ক থাকতে পারবেন ।
অলসতা দূর করার উপায় গুলো অনুশীলন করুন আজ থেকেই ।
আপনি অলসতা দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এর অর্থ হচ্ছে আপনি আগের চেয়েও আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছেন । আপনি আপনার নিজস্ব একটি পরিকল্পনা অনুসরণ করছেন । আপনার জয়ের সামর্থ বাড়ছে, লক্ষ্য অর্জন করছেন । ধাপে ধাপে আপনার জীবন উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে । আপনার জীবনে অলসতার কোন স্থান নেই ।
সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।
Leave a Reply