জার্মানির একটি ছোট শহর উলমে এক সম্ভ্রান্ত ইহুদি পরিবারে বিজ্ঞানের রাজপুত্র আলবার্ট আইনস্টাইন জন্ম গ্রহন করেন ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ ।
বিজ্ঞানে এক অনন্য নাম আলবার্ট আইনস্টাইন । তাঁর সংগ্রাময় এবং বনাঢ্য জীবনের অধ্যায় গুলো এত বড় যে সংক্ষিপ্ত করে উপস্থাপন করা বেশ কষ্টসাধ্য । তাই আমরা কয়েকটি পর্বে সাজিয়েছি বিজ্ঞানের রাজপুত্র আলবার্ট আইনস্টাইন সংক্ষিপ্ত জীবনী ।
আজ থাকছে প্রথম পর্ব । তাহলে চলুন জেনে আসা যাক সর্ব কালের সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন সম্পর্কে ।
তাঁর পিতা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। মাঝে মাঝেই ছেলেকে নানা খেলনা এনে দিতেন। শিশু আইনস্টাইন এর বিচিত্র চরিত্রকে সেইদিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি তার অভিভাবক, তার শিক্ষকদের। স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযোগ আসত যে, আইনস্টাইন পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী এবং বেশ আনমনা। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন।
স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ করেছিলেন আইনস্টাইন পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী এবং বেশ আনমনা।
আইনস্টাইনের একমাত্র সঙ্গী ছিলেন তার মা। তাঁর মায়ের কাছে তিনি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানান সুর শুনতেন । আর বেহালায় সেই সুর তুলে নিতেন । এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের আজীবন কালের সাথী। বাবাকে বড় একটা কাছে পেতেন না আইনস্টাইন। নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন।
সেই আনন্দে ভরা দিনগুলোর মাঝে হঠাৎ কালো মেঘ ঘনিয়ে এল। সেই শৈশবেই আইনস্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ত স্বাদ। তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে ক্যাথলিক ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতে হতো।স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিষাদ হয়ে যায় তার কাছে।
সকলে মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু সেখানে একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন।
দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সের মধ্যে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, নিউটনের রচনা পড়ে শেষ করে ফেললেন। বিজ্ঞান, দর্শনের সাথে পড়তেন গ্যেটে, শিলার, শেক্সপিয়ার। অবসর সময়ে বেহালায় বিটোফোন, মোতসার্টের সুর তুলতেন। এরাই ছিল তার সঙ্গী বন্ধু, তাঁর জগৎ।
এই সময় বাবার ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন। তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সকলে মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু সেখানে একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন।
সুইজারল্যান্ডের একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। প্রথমবার তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করলেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছে। আইনস্টাইন অনুভব করলেন সংসারের দায়-দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতেই হবে। শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করার জন্য তিনি পদার্থবিদ্যা ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা আরম্ভ করলেন।
নিরুপায় আইনস্টাইন খরচ চালানোর প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করলেন।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে শিক্ষকতার জন্য বিভিন্ন স্কুলে দরখাস্ত করতে আরম্ভ করলেন। অনেকের চেয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা তার বেশি ছিল কিন্তু কোথাও চাকরি পেলেন না। কারণ তার অপরাধ তিনি ইহুদি।
নিরুপায় আইনস্টাইন খরচ চালানোর প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করলেন।
এই সময় আইনস্টাইন তার স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেককে বিয়ে করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। মিলেভা শুধু আইনস্টাইনের স্ত্রী ছিলেন না, প্রকৃত অর্থেই তার জীবনসঙ্গী ছিলেন।
স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার।
আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন শিক্ষকতার কাজ পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। একটি অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার। তার এই গোপন সাধনার কথা শুধু মিলেভাকে বলেছিলেন, ‘আমি এই বিশ্বপ্রকৃতির স্থান ও সময় নিয়ে গবেষণা করছি।’
আইনস্টাইনের এই গবেষণায় ছিল না কোনো ল্যাবরেটরি, ছিল না কোনো যন্ত্রপাতি। তার একমাত্র অবলম্বন ছিল খাতা-কলম আর তার অসাধারণ চিন্তাশক্তি।
অবশেষে শেষ হলো তার গবেষণা। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বার্লিনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা Annalen der physik-এর অফিসে।
এই পত্রিকায় ১৯০১ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত আইনস্টাইন পাঁচটি রচনা প্রকাশ করলেন। এসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আইনস্টাইনের নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কোনো সুরাহা হলো না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নিলেন।
একমাত্র অবলম্বন ছিল খাতা-কলম আর তাঁর অসাধারণ চিন্তাশক্তি।
একদিকে অফিসের কাজ, মিলেভার স্নেহভরা ভালোবাসা, অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অবশেষে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হলো তার চারটি রচনা-প্রথমটি আলোর গঠন ও শক্তি সম্পর্কে। দ্বিতীয়টি অ্যাটমের আকৃতি-প্রকৃতি। তৃতীয়টি ব্রাউনিয়াম মুভমেন্টের ক্রমবিকাশের তত্ত্ব।
চতুর্থটি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। যা বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত করল।
এই আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ বা অন্য কিছুর তুলনা। আইনস্টাইন বললেন আমরা যখন কোনো সময় বা স্থান পরিমাপ করি তখন আমাদের অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তিনি বলেছেন আলোক বিশ্বজগৎ, কাল এবং মাত্রা আপেক্ষিক।
আমাদের মহাবিশ্বে একটি মাত্র গতি আছে যা আপেক্ষিক নয়, অন্য কোনো গতির সঙ্গেও এর তুলনা হয় না-এই গতি হচ্ছে আলোকের গতি। এই গতি কখনোই পরিবর্তন হয় না।
এই সময় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আইনস্টাইনকে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য। ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। এরই সাথে পেটেন্ট অফিসের চাকরিও করেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন এর ১২ টি উক্তি | বদলে দিতে পারে আপনার জীবন
বিজ্ঞান জগতে ক্রমশই আইনস্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ছিল। বিজ্ঞানী কেলভিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এখানে তাকে অনারারি ডক্টরেট উপাধি দেয়া হলো। এরপর তার ডাক এল জার্মানির সলসবার্গ কনফারেন্স থেকে। এখানে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সামনে তার প্রবন্ধ পড়লেন আইনস্টাইন।
তিনি বললেন, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এমন কোনো এক তত্ত্ব পাব যা আলোর কণাতত্ত্ব এবং তরঙ্গ তত্ত্বকে সময়ের বাঁধনে বাঁধতে পারবে।
আইনস্টাইনের এই উক্তির জবাবে বিজ্ঞানী প্লাঙ্ক বললেন, আইনস্টাইন যা চিন্তা করছেন সেই পর্যায়ে চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি। এর উত্তরে আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের E=mc2 উৎপত্তিটি আলোচনা করে বোঝালেন তিনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন তা কতখানি সত্য।
১৯০৮ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার পদ সৃষ্টি করা হলো। রাজনৈতিক মহলের চাপে এই পদে মনোনীত করা হলো আইনস্টাইনের সহপাঠী ফ্রেডরিখ এডলারকে। ফ্রেডরিক নতুন পদে যোগ দিয়েই জানতে পারলেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের পরিবর্তে তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ নেই। তার তুলনায় আমার জ্ঞান নেহাতই নগণ্য।
যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উপলব্ধি করতে পারলেন ফ্রেডরিখের কথার গুরুত্ব। অবশেষে ১৯০৯ সালে আইনস্টাইন তার পেটেন্ট অফিসের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করলেন। জুরিখে এসে বাসা ভাড়া করলেন।
আইনস্টাইন আর কেরানি নন, প্রফেসর। কিন্তু মাইনে আগে পেতেন ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক, এখনো তাই। তবে লেকচার ফি বাবদ সামান্য কিছু বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সুযোগে বহু মানুষের সাথে, গুণী বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় হয়।
এমন সময় ডাক এল জার্মানির প্রাগ থেকে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে তাকে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। মাইনে আগের চেয়ে বেশি। তাছাড়া প্রাগে গবেষণার জন্য পাবেন বিশাল লাইব্রেরি। ১৯১১ সালে সপরিবারে প্রাগে এলেন আইনস্টাইন। কয়েক মাস আগে তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়েছে।
অবশেষে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এল আইনস্টাইনের। ১৯১২ সালে প্রাগ ত্যাগ করে এলেন জুরিখে। এখানে তখন ছুটি কাটাতে এসেছিলেন মাদাম কুরি, সঙ্গে দুই কন্যা। দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে গড়ে উঠল মধুর বন্ধুত্ব। পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে মাদাম কুরি ব্যাখ্যা করেন তেজস্ক্রিয়তা আর আইনস্টাইন বলেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব।
একদিন নিজের তত্ত্বের কথা বলতে বলতে এত তন্ময় হয়ে পড়েছিলেন পথের ধারে গর্তের মধ্যে গড়িয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। তাই দেখে মেরি কুরির দুই মেয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল। গর্ত থেকে উঠে তাদের সঙ্গে আইনস্টাইনও হাসিতে যোগ দিলেন।
এলসার সান্নিধ্য বরাবরই মুগ্ধ করত আইনস্টাইনকে।
সেই সময় জার্মানিতে কাইজারের পৃষ্ঠপোষকতায় বার্লিন শহরে গড়ে উঠেছে কাইজার তিলহেলম ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানের এতবড় গবেষণাগার পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে যোগ দিয়েছেন প্লাঙ্ক, নার্নস্ট, হারের আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু আইনস্টাইন না থাকলে যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সবকিছু। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। সবকিছু দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। শুধু গবেষণাগার নয়, বহু বিজ্ঞানীকেও কাছে পাওয়া যাবে। একসাথে কাজ করা যাবে। তাকে মাইনে দেয়া হলো বর্তমান মাইনের দ্বিগুণ।
১৯১৪ সালে বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। যখন আইনস্টাইন বার্লিন ছেড়েছিলেন তখন তিনি পনেরো বছরের কিশোর। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর ফিরে এলেন নিজের শহরে। চেনাজানা পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হলো।
সবচেয়ে ভালো লাগল দূরসম্পর্কিত বোন কাছে ফিরে এসেছে। এলসার সান্নিধ্য বরাবরই মুগ্ধ করত আইনস্টাইনকে। অল্পদিনেই অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
ছেলেবেলা থেকেই যেখানে সেখানে অঙ্ক করার অভ্যাস ছিল আইনস্টাইনের। কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো টেবিলের ওপর। টেবিল ভর্তি হয়ে গেলে মাটিতে বসে চেয়ারের উপরেই অঙ্ক কষে চলেছেন।
গবেষণায় যতই মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন আইনস্টাইন, সংসারের প্রতি ততই উদাসীন হয়ে পড়ছিলেন। স্ত্রী মিলেভার সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমশই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন মিলেভা। দুই ছেলেকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে গেলেন। কয়েক মাস কেটে গেল আর ফিরলেন না মিলেভা।
সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলা হলো। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেল আলো বাঁকে।
এদিকে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলো। বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়লেন যুদ্ধে। আইনস্টাইন এই যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ব্যথিত হলেন। এরই সাথে সংসারের একাকিত্ব, স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন আইনস্টাইন।
এই সময় অসুস্থ আইনস্টাইনের পাশে এসে দাঁড়ালেন এলসা। এলসার অক্লান্ত সেবা-যত্নে ক্রমশই সুস্থ হয়ে উঠলেন আইনস্টাইন। তিনি স্থির করলেন মিলেভার সাথে আর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। অবশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করলেন।
এদিকে যুদ্ধ শেষ হলো। কাইজারের পতন ঘটল। প্রতিষ্ঠা হলো নতুন জার্মান রিপাবলিকের। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তখনো প্রমাণিত হয়নি। এগিয়ে এলেন ইংরেজ বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলা হলো। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেল আলো বাঁকে।
আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক।
বিজ্ঞানীরা উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন। মানুষ তার জ্ঞানের সীমানাকে অতিক্রম করতে চলেছে। অবশেষে ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে ঘোষণা করা হলো সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার, আলো বেঁকে যায়। এই বাঁকের নিয়ম নিউটনের তত্ত্বে নেই। আলোর বাঁকের মাপ আছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সূত্রে।
পরিহাসপ্রিয় আইনস্টাইন তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কৌতুক করে বললেন, আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।
একদিন এক তরুণ সাংবাদিক বললেন, আপনি সংক্ষেপে বলুন আপেক্ষিক তত্ত্বটা কী?
আইনস্টাইন কৌতুক করে বললেন, যখন একজন লোক কোনো সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে তখন তার মনে হয় যে যেন এক মিনিট বসে আছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উনানের ধারে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তার মনে হয় সে যেন এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। এই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।
আপেক্ষিক তত্ত্বে জটিলতার দুর্বোধ্যতার কারণে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল। একদিন এক সুন্দরী তরুণী তার প্রেমিকের সাথে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দিল।
পরদিন যখন মেয়েটি ফাদারের কাছে গিয়েছে ফাদার তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া।
মেয়েটি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করল, কোন বিষয়? ফাদার বললেন তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল। হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।
আমেরিকার এক বিখ্যাত সুরকার জর্জ তার এক বন্ধুকে বললেন, একজন মানুষ কুড়ি বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেন, আর ভাবলে অবাক হতে হয় সেই চিন্তাটুকুকে প্রকাশ করলেন মাত্র তিন পাতায়। বন্ধুটি জবাব দিল নিশ্চয়ই খুব ছোট অক্ষরে ছাপা হয়েছিল।
আইনস্টাইন আমেরিকায় গিয়েছেন, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরল। একজন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি এক কথায় আপেক্ষিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে পারেন? আইনস্টাইন জবাব দিলেন, না।
আজকাল মেয়েরা কেন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা করছে? আইনস্টাইন হাসতে হাসতে বললেন, মেয়েরা সব সময়ই নতুন কিছু পছন্দ করে-এই বছরের নতুন জিনিস হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।
এই ছিলো আলবার্ট আইনস্টাইনকে নিয়ে আমাদের প্রথম পর্ব । দ্বিতীয় পর্বটি খুব শীঘ্রই আসছে । আমাদের সাথেই থাকুন ভালো থাকুন ।