নতুন বছরের সেরা কর্মপরিকল্পনা যা প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর গ্রহণ করা জরুরী

Author:

Published:

Updated:

নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা

শুরুতেই সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছর মানেই নতুন অধ্যায়ের শুরু, নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা করা । নতুন অধ্যায়ের শুরু মানেই নিজেকে আরো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। ছাত্রছাত্রীদের জন্যে এই প্রচেষ্টাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নতুন বছরে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়েই তাদের জীবনের ভিত্তি মজবুত হয়ে উঠে। 

নতুন বছরে নতুন উদ্যোমে নিজের জীবনকে সাজিয়ে নেওয়া প্রতিটা ছাত্রছাত্রীর জন্যে একটা চ্যালেঞ্জও বটে। এই চ্যালেঞ্জটিই পারে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করাতে। তবে এই চ্যালেঞ্জে সফল হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। একটি সঠিক পরিকল্পনাই পারে আপনার সামনের দিনগুলো আরো বেশি সুন্দর করতে।

ঠিক নতুন বছরের শুরুর আগেই নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা স্থির করে ফেলতে হবে। তাহলে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা আপনার জন্যে অনেক সহজ হয়ে যাবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক নতুন বছরের কি কি কর্মপরিকল্পনা আপনাকে ছাত্রজীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবেঃ  

১) নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুনঃ

নতুন বছরের প্রতিটি ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন। ক্লাসে আপনার নিয়মিত উপস্থিতি শিক্ষকের লেকচার বুঝতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আপনি শিক্ষকের লেকচার থেকে প্রতিটা অধ্যায় কিংবা কোর্সের বিস্তারিত জানতে পারবেন। এটি আপনাকে পড়া আত্মস্থ করতে অনেক সাহায্য করবে। এছাড়াও এটি পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কেও একটা স্পষ্ট ধারণা দিবে। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি ক্লাসমেটদের সাথে আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করবে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে আপনি একঘেয়ামী অনুভব করবেন না।

২) একাডেমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের চেষ্টা করুনঃ

পরীক্ষার ফলাফল হলো ছাত্রজীবনের মাপকাঠি। পরীক্ষার ফলাফলেই প্রকাশ পাবে পুরো বছর জুড়ে আপনি আপনার পাঠ্যবই থেকে কতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। তাই নতুন বছরে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যে একটি পরিকল্পনা বছরের শুরুতেই নিয়ে ফেলুন। শুধু পাঠ্যবই নয়, পাঠ্যবইয়ের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বইও পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে একাডেমিক দিক দিয়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন ও আপনার জ্ঞানের পরিধিও বাড়বে।

৩) আলসেমি পরিহার করুনঃ

নতুন বছরের শুরু থেকেই প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করার চেষ্টা করুন। আজকের পড়া আগামীকালের জন্যে ফেলে রাখবেন না। পড়া জমিয়ে রাখলে পরীক্ষার আগে আপনি মানসিক চাপ অনুভব করবেন। মানসিক চাপের কারণে পড়া আত্মস্থ করতে সময় বেশি লাগবে। এছাড়াও হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন শেষ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাতে রাখবেন। এতে করে আপনি কোন গুরুতর সমস্যায় পড়লেও যথাসময়ে কাজটি জমা দিতে পারবেন। এছাড়াও পর্যাপ্ত সময়ের কারণে আপনি নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিতে পারবেন। এমনকি পুরো অ্যাসাইনমেন্ট বা হোমওয়ার্ক বা প্রেজেন্টেশন শেষের পর সেটি নিয়ে স্টাডি করারও সুযোগ পাবেন।

৪) সময় অপচয় কমিয়ে ফেলুনঃ

বছরের শুরুতেই নিজের উপর একটা জরিপ করে ফেলুন। জরিপের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করুনঃ গত বছরে মোবাইল, ইন্টারনেট কিংবা অন্যান্য কাজে আপনি কতটা সময় অপচয় করেছেন। তারপর খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এসব কাজে সময় অপচয়ের ফলে আপনি কতটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। নতুন বছরে সময় অপচয়ের পরিমাণ যথাসম্ভব কমিয়ে আনবেন বলে সিদ্ধান্ত নিন। সময়ের অপচয় কমাতে পারলে আপনি ক্লাসের পড়া কিংবা হোমওয়ার্ক কিংবা রিসার্চের বিষয়ে বেশি মনোযোগী হতে পারবেন। এটি আপনার নতুন বছরের প্রাপ্তিকে আরো সুন্দর করে তুলবে।

৫) নতুন কিছু দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুনঃ

ছাত্রজীবন হলো পরবর্তী জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার সর্বোত্তম সময়। এসময় আপনি যত বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন ততবেশি এগিয়ে থাকবেন পরবর্তী জীবনে। তাই নতুন বছরে নতুন কিছু দক্ষতা অর্জনের সিদ্ধান্ত নিন। এই দক্ষতাগুলো আপনার মানসিকতাকে আরো সুগঠিত করবে। ছাত্রজীবনে অর্জিত দক্ষতাগুলো কর্মক্ষেত্রে আপনাকে বহুগুণ এগিয়ে রাখবে।

৬) সঞ্চয় গড়ে তুলুনঃ

উন্নত বিশ্বের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির প্রধান কারণ হলো – ছাত্র-ছাত্রীদের সঞ্চয়ী মনোভাব। তাই আপনিও ছাত্রজীবন থেকেই সঞ্চয়ী হয়ে উঠুন। স্কুল কিংবা কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাদের হাতখরচ বাঁচিয়ে অল্প অল্প করে সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি কোন পার্ট-টাইম চাকুরী করে কিংবা টিউশন করিয়ে সেখান থেকে সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। বছরের শুরুতেই সঞ্চয় শুরু করে দিলে বছরের শেষে একটি বড় অংকের সঞ্চয় পেতে পারেন। পরবর্তীতে এই সঞ্চয় অন্য কোন কাজে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

নতুন বছরের সেরা কর্মপরিকল্পনা, নতুন বছর, নতুন বছরে ছাত্র-ছাত্রীদের করণীয়, নতুন বছরে কর্মপরিকল্পনা
নতুন বছরে কর্মপরিকল্পনা

৭) বিভিন্ন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করুনঃ

সমাজসেবা, ফোরাম কিংবা সেমিনারে উপস্থিতি, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, কোন অনুষ্ঠানের সংগঠক হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি কাজের সাথে নতুন বছরের শুরু থেকেই নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। এতে করে আপনি প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন। এগুলো আপনাকে একঘেয়ামী জীবন থেকে একটু বিরতি দিবে। ফলে আপনি একাডেমিক পড়াশোনায় উদ্যোমী হতে পারবেন।

৮) স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোনঃ

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। নিজের সুস্থতা ছাত্রজীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অসুস্থতার কারণে আপনি নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারবেন না কিংবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তাই বছরের একদম শুরু থেকেই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। যে খাবারগুলো গ্রহণ করলে আপনার অসুস্থ হবার সম্ভাবনা আছে সেগুলো থেকে বিরত থাকুন। সবসময় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান। পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে কাজের প্রতি মনোযোগী করে তুলবে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন। এতে করে শারীরিক আলসেমি কেটে যাবে। সম্ভব হলে প্রতিদিন ইয়োগা করুন।

৯) নিজের ভেতর ইতিবাচক পরিবর্তন আনুনঃ

নতুন বছরে নিজের ভেতর কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আপনাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে। ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো হতে পারেঃ নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, নিজের ভেতর আত্মতৃপ্তি আনা, প্রতিটা বিষয়ের কেবল নেতিবাচক দিক নিয়ে কম ভাবা, নিজেই নিজেকে সম্মান করতে শেখা, অন্যের প্রতি বিনয়ী হওয়া, উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা ইত্যাদি। এগুলো আপনার একাডেমিক কার্যক্রমের প্রতি সরাসরি প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু আপনার ভেতর একটি অনন্য ব্যক্তিত্ব তৈরী করে দিবে। নিজের ভেতর একজন মার্জিত মানুষ নির্মাণের মধ্যেও ছাত্রজীবনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই নতুন বছরে আপনার কর্মপরিকল্পনার মধ্যে এসব বিষয় যুক্ত করা একান্ত জরুরী।

১০) ৫ বছর পরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করাঃ

“৫ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান” সেটি আসছে বছরের একদম শুরুতেই ঠিক করে ফেলুন। এই লক্ষ্যের জন্যে একদম সংক্ষেপে আগামী বছরের জন্যে একটি ছোট মাইলস্টোন ঠিক করুন। নতুন বছরে আপনার প্রধান লক্ষ্য হবে – সেই মাইলস্টোনে পৌঁছানো। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যে ছাত্রজীবন থেকেই সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

নতুন বছর, নতুন সময় আর নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়া – এই তিনটির সমন্বয় আপনাকে একটি সফল বছর উপহার দিতে পারে। সেই উপহারটি পেতে বছরের শুরুতেই পুরো বছরের কর্মপরিকল্পনা আপনার হাতে নেয়া প্রয়োজন।

তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলুন। নতুন বছরের এই নতুন পথচলায় আমাদের পক্ষ থেকে আপনার জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা। আপনাদের পথচলায় সব সময় সাথে আছে পাই ফিংগারস মোটিভেশন।

ওয়াসিক সৈকত

Latest Posts

  • ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

    ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

    ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করাকে এককথায় ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। খুব সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং কি এর সংজ্ঞাটা দেওয়া হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এতোটাও সহজ কিছু না। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কীভাবে করে? ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা কি, অসুবিধা কি, ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা হিসেবে কেমন- এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে…

    Read more

  • জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা অনেকেই মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসবুকের গল্প জানি । একটি ছোট্ট রুম থেকে সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে সকল ভাষাভাষী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসকে বদলে দিয়েছে ফেসবুক । কি ভাবে মার্ক জাকারবার্গ করলেন এটা ? আপনি কি জানেন জাকারবার্গকে তার স্বপ্নের জন্য কি কি ত্যাগ করতে…

    Read more

  • বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    ডিসকভারি চ্যানেলে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি দেখেননি এমন লোক কমই পাওয়া যাবে । অনুষ্ঠানটি যার কারণে সারা বিশ্বে এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে তিনি হচ্ছেন এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস (Bear Grylls) । সবার কাছে বিয়ার গ্রিলস নামেই পরিচিত। তিনি একাধারে একজন লেখক, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, সাবেক সেনা কমান্ডো ও বর্তমানে বিশ্ব স্কাউট সংস্থার চীফ অব স্কাউট ।…

    Read more