বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইতিবাচক মানসিকতা। ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগে আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ও যুক্তি দিয়ে নিজের মানসিক অবস্থাকে মূল্যায়ন করতে পারাটাই সবচেয়ে শ্রেয়। চিকিৎসকের শরণাপন্ন তখনই হওয়া ভাল যখন নিজের নিয়ন্ত্রণটা আর নিজের আয়ত্ত্বে থাকে না।
অর্থাৎ, বারবার চেষ্টা করেও আপনি ব্যর্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিচে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির ১০টি উপায় উল্লেখ করা হলো
১) প্রতিরোধই উত্তম:
একটু সময় নিয়ে নিজের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেকে জানুন। কোন বিষয়গুলো আপনাকে বিষণ্ণতায় তলিয়ে দিচ্ছে, তা ভাবুন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকুন, সুষম ডায়েট অনুসরণ করুন, এগুলো বিষণ্ণতা প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়।
২) শরীরচর্চা করুন:
একটি ভালো ব্যায়াম ক্লাব বা জিমে ভর্তি হয়ে যান কিংবা বাড়িতে ও পার্কে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। একজন সুদক্ষ ব্যায়াম প্রশিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিন। নিজের ইচ্ছামতো ব্যায়াম না করাই ভালো। প্রয়োজনে দেশী-বিদেশী লেখকদের ব্যায়ামের কিছু বই নিয়মিত পড়–ন। সঠিক নিয়মগুলো জেনে নিন।
যোগব্যায়াম, খালি হাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটাও বেশ ভালো ব্যায়াম। তবে, বয়সভেদে ব্যায়ামের ধরন ভিন্ন। সেটা জেনে নিন।
বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইতিবাচক মানসিকতা
৩) সুষম ডায়েট অনুসরণ করুন:
অনেকেই আছেন যারা শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে স্লিম হতে চান। আর সে লক্ষ্যে নিজের ইচ্ছামতো ডায়েট মেনে চলেন। আর, খাওয়া-দাওয়া অনেকটা কমিয়ে নানা রোগ বাধিয়ে বসে থাকেন।
কিন্তু, এটা কখনও হয়তো ভাবেন না যে, কম বা বেশি নয় বরং পরিমিত মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
তাই প্রথমে একটি সুষম ডায়েট চার্ট করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যায়াম করলে ডায়েটে কি পরিবর্তন আনতে হবে, তা জানতে একজন দক্ষ ব্যায়াম প্রশিক্ষক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
৪) পর্যাপ্ত ঘুমান:
হতাশা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঘুমের সময়ে তারতম্য হতে পারে। কেউ হয়তো বেশি ঘুমান, কেউ কম। কেউ কেউ অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নয়।
আবার কমও নয়। এটা মাথায় রাখুন। ভালো ঘুম বা সুনিদ্রার বিকল্প নেই। তাই ঘুম নিয়ে পত্র-পত্রিকা, বই ও ইন্টারনেটে লেখা বিভিন্ন তথ্য অনুসরণ করুন। এছাড়া পড়তে পারেন বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা, ইতিহাস বা অনুপ্রেরণামূলক বিষয় নিয়ে দারুণ একটি Online Bangla Portal অভিযাত্রী.কম।
৫) প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকুন:
শহরে থাকলে সুনির্মল প্রকৃতির সংস্পর্শ পাওয়াটা বেশ কঠিন। তারপরও আশপাশে বড় বা ভালো কোন পার্ক থাকলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেখানে চলে যান। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট এভাবে সময় ব্যয় করুন।
নিজের বাগান থাকলে সেখানে সময় কাটান। সম্ভব হলে, ২ সপ্তাহে একবার শহর থেকে দূরে কোন গ্রামে ঘুরে আসুন। এতে একঘেঁয়েমিও কাটবে। শরীর ও মনটাও ঝরঝরে ও স্বতঃস্ফূর্ত হবে।
৬) সৃজনশীল হয়ে উঠুন:
নিজের চিন্তাধারাকে আরও বেশি সৃজনশীল করে তুলুন। প্রত্যেকেরই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কিছু অসাধারণ গুণাবলী রয়েছে। নিজের মধ্যে সেগুলো আবিষ্কার করুন ও কাজে লাগান। নিজের হাতে কিছু করুন।
ছবি তোলা বা ভিডিও করা, ছবি আঁকা, ছড়া-কবিতা, গল্প বা ডায়েরি লেখা ইত্যাদির মধ্যে নিজেকে দিনের কিছুটা সময় ব্যস্ত রাখুন।
৭) বই পড়ুন:
লাইব্রেরি বা পাঠাগারে গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। খবরের কাগজ বা বই এখন ইন্টারনেটেই পড়া যায়। তা সত্ত্বেও কাগজের পাতা উল্টে বই পড়ার আনন্দ পেতে কিছু বই সংগ্রহ করা মন্দ নয়। ধর্মীয় বই পড়লেও মনে প্রশান্তি আসবে।
৮) মানুষের উপকার করুন:
অন্য মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের উপকার করুন। দুঃস্থ, অসহায় কোন মানুষের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান ও তাকে সাহায্য করুন। তার অবস্থা মন থেকে বোঝার চেষ্টা করুন।
দেখবেন প্রশান্তিতে মন ভরে উঠেছে। নিজেকে খুব হালকা লাগবে। বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির জন্য শুধু নয়। এ চর্চাটা সারা জীবন করুন। জীবন আরও সুখময় হয়ে উঠবে।
পড়ে আসুন | বস্তি থেকে কিভাবে হলেন হলিউডের সেরা অভিনেতা
৯) সমস্যার কথা শেয়ার করুন:
খুব কাছের কয়েকজনের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে নিজের সমস্যার কথাগুলো মন খুলে বলুন। সমস্যাগুলো থেকে সমাধানের উপায় খুঁজতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন। এতে একদিকে যেমন সমাধান বের হয়ে আসবে, অন্যদিকে আপনিও অনেক বেশি হালকা অনুভব করবেন।
কারণ, নেতিবাচক চিন্তা, নিরাশা, হতাশা আর কষ্টের কারণে দেখা দেয় বিষণ্ণতা। তাই প্রাথমিক পর্যায়েই এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। প্রয়োজনে কোন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। জীবনে নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। দারুণ সব পরিকল্পনা করুন। একটি একটি করে দিন পার করুন।
১০) বন্ধুকে পাশে রাখুন:
বিষণ্ণতার সময় অনেকে নিজেকে এতোটা বেশি নিজের মধ্যে গুটিয়ে ফেলেন, যা তাকে আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। একাকীত্বকে আপন করে নিয়ে নিঃসঙ্গ থাকা বোকাদের কাজ। তাই দুঃসময়ে বন্ধুদের পাশে রাখুন।
আমরা সামাজিক জীব। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়ের একটি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে যান। তারা আপনার বাড়িতে এলে সময় দিন। এছাড়াও একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যান। বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পাবেন।
দারুণ সব পরিকল্পনা করুন। একটি একটি করে দিন পার করুন।
আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন । অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, সফলতার সূত্র এবং জীবনের নানান সমস্যা আপনাদের পাশে আছে পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন ।
সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।
চিন্তা দূর করার উপায় জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন
Leave a Reply