আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকে, স্বপ্ন থাকে- আমরা আমাদের স্বপ্ন ছুঁতে চাই, আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই । কিন্তু ক’জন পারে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে, সাফল্যকে ছুঁয়ে দেখতে?
প্রায় ৯৯% লোক তার স্বপ্নের পথে চলতে পারে না । এমনকি এদের মধ্যে বেশির ভাগই চলার সাহস পায় না । অথবা যারা চলতে শুরু করে, তারাও একটা পর্যায়ে গিয়ে ছিটকে যায় পথ থেকে । প্রথমে একটু চেষ্টা করেই যখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন হতাশ হয়ে ছেড়ে দেয়- ‘আমার দ্বারা হবে না, আমি পারবো না’ ।
তখন নিজের ইচ্ছাকে আমরা বানিয়ে ফেলি- রূপকথার গল্প । নিজের অজান্তেই ব্যর্থতার ট্যাগে নিজেকে জুড়ে দেই ।
কতগুলো দরজা তোমার সামনে বন্ধ হয়ে গেল- সেটা ব্যাপার না । শুধু চেষ্টা করতে থাকো
একটু বাস্তব এবং চোখে পড়ার মতো একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা প্রমাণসহ আরও সহজ হয়ে যাবে । আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না, জানুয়ারির প্রথম দিকে জিমে যে পরিমাণ লোকের ভিড় থাকে, মার্চে তা কমে গিয়ে একেবারে গুটিকতকে নেমে আসে । এর কারণ কি? কেউ কি বলতে পারবেন?
জানুয়ারির প্রথমে বেশিরভাগ লোক একটি নতুন লক্ষ্য ঠিক করে, সে দারুণ আকর্ষণীয় একটি বডি বানাবে এবং এজন্য প্রতিদিন জিমে গিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যায়াম করবে সে- তাকে নিজের শরীর ফিট এবং পরিপাটি রাখতে হবে ।
একটা সময় ছিল, রাতে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে গাড়ির পেছনে ঘুমাতেন । কারণ, তার কোন ঘর বাড়ি ছিল না
কিন্তু যতই সময় গড়ায়, সে একটা সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে শুরু করে যে, প্রথম দিকে এই কাজটা যতটা সহজ ভেবেছিল, আসলে ততোটা সহজ না । একটু একটু করে তার কাছে বডি বিল্ডিং কাজটা কঠিন হয়ে উঠতে থাকে । তারপর একপর্যায়ে ছেড়েই দেয় ।
আর, আমরা যাদের সফল বলি, তাদের ক্ষেত্রে?
সেই লোকগুলোও কিন্তু ঠিক একই রকম অভিজ্ঞতা কিংবা উপলব্ধির মধ্য দিয়ে যায় । তারা সেই কঠিন পথে শেষ পর্যন্ত হেঁটে গিয়েই সফল হয়েছে । সুতরাং যেখানে ৯৯% লোক ছেড়ে দিয়ে চলে যায়, সেখানে বাকি ১%, মাত্র ১% লোক, প্রবল উদ্যম নিয়ে ধরে রাখে নিজেকে, সামনের দিকে একটু একটু করে নিজেকে ঠেলতে থাকে ।
এর কারণ কি?
কারণ, তারা একটা ব্যাপার জানে, ১০০% নিশ্চিত থাকে যে, তারা একটু একটু করে লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে । এবং এই আত্মবিশ্বাসটাই তাদের সক্রিয় করে রাখে প্রতিনিয়ত, সব নেতিবাচক চিন্তা কিংবা কষ্টের অনুভূতিকে পরাজিত করতে, এমন একটি অনুভূতিই যথেষ্ট । উন্নতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে– আপনার আসলে এটাই প্রয়োজন ।
“বিলিয়নিয়ার জন পল ডেজোরিয়া, জন পল মিচেল সিস্টেম এবং প্যাট্রন টাকিলার সহপ্রতিষ্ঠাতা- একটা সময় ছিল, রাতে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে গাড়ির পেছনে ঘুমাতেন । কারণ, তার কোন ঘর বাড়ি ছিল না । তিনি গৃহহীন ছিলেন ।
আপনাকেও সহিষ্ণু হতে হবে, প্রতিজ্ঞা করতে হবে
কয়েকদিন আগে কেউ একজন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘জন পল ! আমি কীভাবে তোমার মত হতে পারি? আমি কীভাবে তোমার মত একজন এতো বড় বিলিয়নিয়ার হতে পারি?’
উত্তরে পল বলেছিলেন, তোমার জন্য মাত্র দুটি উপদেশ আছে । যেগুলো তোমার যেকোন সাফল্যের জন্যই সহায়ক হবে ।
প্রথমটি হচ্ছে– এটা জানা এবং মেনে নেওয়া যে, সব সময় তোমার মুখের সামনে এসে ধাম ধাম করে দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে । কিন্তু যদি তোমার পথ চলা এবং চেষ্টা করতে থাকার মতো যথেষ্ট শক্তি না থাকে, তাহলে তুমি কখনোই দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকার সুযোগ পাবে না ।
কতগুলো দরজা তোমার সামনে বন্ধ হয়ে গেল- সেটা ব্যাপার না । শুধু চেষ্টা করতে থাকো ।
দ্বিতীয় পরামর্শটি হচ্ছে, এমনই ৫১ তম দরজাটির সামনেও তোমাকে সমান আগ্রহী থাকতে হবে, যেমনটা উৎসাহী তুমি একেবারে প্রথম দরজাটির সামনে ছিলে ।
আপনার চলার পথে এটাই সত্যি, কারণ প্রথম দরজা থেকে ৫০ তম দরজার প্রত্যেকটি আপনার সামনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে । কিন্তু একান্নতম দরজাটি হতে পারে আপনার সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ । এটাই হয়ত আপনার সামনে খোলা থাকবে ।
এটাই হয়ত আপনার জীবন বদলে দেবে । তাই, যদি ব্যর্থতা এবং প্রতিকূলতাকে জয় করার শক্তি না থাকে আপনার, আপনি জীবনের শ্রেষ্ঠ সুযোগকে হাতছাড়া করে ফেলবেন ।
আপনার কঠিন সময়ই আপনাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের দিকে নিয়ে যাবে
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার । যাকে বলা হয় মি. ইউনিভার্স । সর্বকালের সেরা বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়ন । তার বডিবিল্ডিংকালীন সময়ে তিনি প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে জিমে প্র্যাকটিস করতেন ।
একদিন এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আচ্ছা আর্নল্ড! তুমি যখন জিমে প্রাকটিসে থাকো, এমন কোন দিন আমি দেখিনি, যেদিন তোমার মুখে হাসি ছিল না । এতো পরিশ্রমের কাজের মধ্যেও তুমি কীভাবে এমন করে হাসি ধরে রাখো? যেখানে অন্যরা সবাই এখানে প্রাকটিসের সময় প্রচণ্ড সিরিয়াস মুডে থাকে?
আর্নল্ড বলেছিলেন, আমি যখন প্রতিটি রেপ(REP) করি- সেটা যত কষ্টকরই হোক না কেন, আমাকে আমার লক্ষ্যের দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় । আর এই পরিতৃপ্তিই আমাকে পৃথিবীর সবথেকে বেশি আনন্দ দেয় । আমি যন্ত্রণা অনুবন করি না, আমি ধৈর্যশীল হই । আমি দেখি, আমার যা কিছু কষ্ট হয়, সেটা আমার সেরা কিছু অর্জনের জন্যই ।
যে দুজনের কথা বললাম, তাদের কথার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন? বিষয় যাই হোক, তারা কিছু পাওয়ার জন্য সত্যিকারের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন ।
আপনাকেও সহিষ্ণু হতে হবে, প্রতিজ্ঞা করতে হবে ।
এখন আমার কথা শোনা থেকে শুরু করে আপনার সেই ৫১ তম খোলা দরজাটি না পাওয়া পর্যন্ত । সেটা জিম, পড়াশুনা, আপনার যেটাই লক্ষ্য থাকে না কেন ।
আর আপনি যদি এর অন্যথা ভাবেন, তাহলে বলবো, আপনার জন্য এরচেয়ে ভাল হবে একটি টিভি শো দেখা অথবা বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া ।
নিজেকে প্রশ্ন করুন । যখন আপনার সাফল্যের দরজাটি খুলে যাবে, তখন আপনি কি করবেন? এবং আপনার জীবনের জন্য এই সাফল্যটি কতটা প্রয়োজন? আপনার সামনের ধাপে পা রাখা মানে সবকিছু ।
আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বলেন, কখনো হাল ছাড়বেন না । আজকে দুঃসাধ্য, কালকে কঠিন, কিন্তু কালকের পর হয়ত আপনার জীবনে নতুন দিন আসবে ।
জেসি জ্যাকসন বলেন, আপনি যদি পেছনে পড়ে যান, তাহলে আরও জোরে সামনের দিকে এগিয়ে চলুন, কিন্তু কখনো ছেড়ে দেবেন না, কখনো হার মানা যাবে না এবং আপনি জেগে উঠুন আপনার প্রতিটি বাধার বিপরীতে ।
সফল ব্যক্তিহাল ছেড়ে দেবেন না, আপনি আসলেই যদি দুঃসাধ্য কিছু চান, হয়ত চাওয়াটা কঠিন কিন্তু অনুতাপটা আরও কঠোর । এটা অর্জন করা অনেক সময়ের ব্যাপার, এই ভেবে কখনো আপনার স্বপ্ন থেকে পালিয়ে আসবেন না, কারণ সময় কিছু ইতোমধ্যেই কমে আসছে ।
কখনো কখনো আপনার কঠিন সময়ই আপনাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের দিকে নিয়ে যাবে । সামনের দিকে এগিয়ে চলুন । কঠিন সময় মানুষকে সবচেয়ে শক্তিশালী করে তোলে ।
আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন । অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, সফলতার সূত্র এবং জীবনের নানান সমস্যা আপনাদের পাশে আছে পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন ।
সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।
Leave a Reply