১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারী অক্সফোর্ডে স্টিফেন হকিং এর জন্ম। পুরো বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং নামে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক আর মা ইসোবেল হকিং ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী।
হকিংয়ের মা মূলত স্কটিশ ছিলেন। পরবর্তীতে চাকুরীর সুবাদে লন্ডনে পাড়ি জমান। তারপর একই কর্মক্ষেত্রে চাকুরীর সুবাদে তার পরিচয় হয় ফ্রাঙ্ক হকিংয়ের সাথে। যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলায় পুরো পৃথিবীতে মাতম চলছে তখন ইসোবেলের গর্ভে স্টিফেন হকিং প্রথম সন্তান হিসেবে আসেন। সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাবা-মা লন্ডন ত্যাগ করে চলে যান অক্সফোর্ডে।
বাবা চেয়েছিলেন বিখ্যাত ওয়েস্টমিনিস্টার স্কুলে ছেলেকে পড়াতে। কিন্তু বৃত্তি পাওয়া ছাড়া এই স্কুলে পড়ানোর মত সামর্থ্য তাদের ছিলো না।
স্টিফেন হকিংয়ের স্কুল জীবন শুরু হয় লন্ডনের হাইগেটে অবস্থিত বাইরন স্কুল হাউজ থেকে। পরবর্তীতে আট বছর বয়সে তিনি সেন্ট আলবানসের একটি বালিকা স্কুলে কয়েক মাসের জন্যে পড়েছিলেন। এরপর রেডলেট স্কুল ও সেন্ট আলবানস বয়েজ স্কুল নামের আরো দুইটি সরকারী স্কুলে পড়াশোনা করেন। হকিংয়ের বাবা-মা লেখাপড়া ও ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন। তাই তার বাবা চেয়েছিলেন বিখ্যাত ওয়েস্টমিনিস্টার স্কুলে ছেলেকে পড়াতে। কিন্তু বৃত্তি পাওয়া ছাড়া এই স্কুলে পড়ানোর মত সামর্থ্য ফ্রাঙ্কের ছিলো না। অন্যদিকে, স্কুলে ভর্তির বৃত্তি পরীক্ষার দিন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১৩ বছর বয়সী হকিং। ফলে সেন্ট আলবানসেই তার ভাগ্য পড়ে রইল।
তবে হকিং নিজেকে পিছিয়ে রাখার পাত্র নন। স্কুলে বন্ধুদের নিয়ে বোর্ড গেম খেলা, নৌকা ও এ্যারোপ্লেনের মডেল তৈরী, ফায়ারওয়ার্ক করাসহ নানান কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ গণিতের শিক্ষক “ডিকরান তাহত্রা”-র সহযোগিতায় একটি ঘড়ির মডেল থেকে কম্পিউটার, পুরোনো টেলিফোনের সুইচবোর্ডসহ নানান কিছু তৈরী করে ফেলেন। আর তাই অল্প দিনের বন্ধু মহলে “আইনস্টাইন’ হিসেবে খ্যাত হয়ে যান। ফলে আগ্রহের পারদ বাড়তে বাড়তে থামে গণিতের দিকে গিয়ে। স্কুলের ধরাবাধা রুটিনের কারণে ভালো না করা এই ছাত্রটি গণিতে গ্রাজুয়েশন করার জন্যে মনস্থির করেন।
কিন্তু বাবা-মার অক্সফোর্ডে পড়াশোনা ও ডাক্তারি পেশার কারণে হকিংয়ে এই ইচ্ছায় বাধা আসে। তাদের দুজনেরই ইচ্ছা ছিলো ছেলে ডাক্তারি পড়বে এবং তা অক্সফোর্ডেই। কিন্তু ছেলের আগ্রহ গণিতে। অন্যদিকে, অক্সফোর্ডে গণিতের উপর পড়াশোনা তখনও শুরু হয় নি। তাই শেষমেষ হকিং পদার্থ ও রসায়নে স্নাতক করার সিন্ধান্ত নিলেন। একই সাথে এমন জটিল দুটি বিষয়ে নিয়ে পড়াশুনা করাটা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়।
“সে অন্য সবার থেকে আলাদা ছিলেন। তিনি এমন কিছু করতেন যা অন্য কেউ করেনি বা করতে পারেনি”।
কিন্তু কঠিন হলেও কি? যে মানুষটার আইকিউ লেভেল আইনস্টাইনের মত ১৬০। তার কাছে কঠিন তত্ত্বকেও সহজ করার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে রয়েছে। এমনকি হয়েছিলোও তাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা নাকি ভয়াবহ সহজ লাগত ১৭ বছর বয়সী এই জিনিয়াসের কাছে। শিক্ষকরা মন্তব্য করেছিলেন, “সে অন্য সবার থেকে আলাদা ছিলেন। তিনি এমন কিছু করতেন যা অন্য কেউ করেনি বা করতে পারেনি”। তাদের বক্তব্য থেকে আরো জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিন বছর বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে গবেষণা আর সায়েন্স ফিকশন পড়া ছাড়া তেমন কিছু করেন নি। বলা হয়ে থাকে, হকিং অক্সফোর্ডে ১০০০ ঘন্টার মত পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি পরীক্ষায় কেবল পদার্থ বিজ্ঞানের অংক উত্তর করতেন। কারণটা কি ধরতে পেরেছেন? হ্যাঁ, ঠিক তাই। গণিতের প্রতি তার আগ্রহ।
যাই হোক, এভাবেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে চলে এলেন। আর ঠিক তখন অধ্যাপকেরা একটা জটিল সমস্যায় পড়লেন। তারা দ্বিধায় পড়লেন, হকিংকে দ্বিতীয় শ্রেণী না প্রথম শ্রেণী কোনটা দেওয়া হবে। তারপর এটি নির্ধারণ করতে হকিংকে ভাইভা বোর্ডে ডাকা হলো। ভবিষ্যত পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলেছিলেন, “যদি আমাকে ফার্স্ট ক্লাস দেন, তাহলে কেম্ব্রিজে চলে যাবো, ওখানে গিয়ে মহাবিশ্বতত্ত্ব পড়বো। যদি সেকেন্ড ক্লাস দেন, তাহলে অক্সফোর্ডেই থাকবো। মনে হয়, ফার্স্ট ক্লাস দিয়ে বিদায় করে দিলেই ভালো হবে”। রবার্ট বার্টম্যান সহ ভাইভা বোর্ডের অন্যান্য পরীক্ষকরা তার বুদ্ধিমত্তায় পরাজিত হলেন। ফার্স্ট ক্লাস পেলেন, ইরান থেকে ঘুরে এলেন, শুরু করলেন কেম্ব্রিজের পিএইচডি জীবন।
কেম্ব্রিজের পিএইচডি ধারী হবার এই যুদ্ধ তার জন্যে অনেকটাই কঠিন ছিলো। তিনি ক্যাম্ব্রিজের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফ্রেড হয়েলের অধীনে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে তিনি ডেনিস সিয়ামার অধীনে মহাবিশ্বতত্ত্বের উপরে গবেষণা শুরু করেন। এটি হকিংয়ের গবেষণার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিলো ডেনিস হকিংয়ের ব্যাপারে খুব আন্তরিক ছিলেন। এছাড়াও হকিং তার গণিতবিদ্যা শাণিত করেন ডেনিসের কাছ থেকে।
হবু প্রেমিকার ছোঁয়াতে তার জীবন বদলে যেতে থাকে।
ক্যামব্রিজে থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পার্টিতে দেখা হয় হকিংয়ের বোনের বান্ধবী জেন উইল্ডের সাথে। জেন ছিলেন ফরাসি সাহিত্যের ছাত্রী। খুব অল্প কয়েকদিনেই তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। হবু প্রেমিকার ছোঁয়াতে তার জীবন বদলে যেতে থাকে। একবার ব্ল্যাক হোল বিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করলেন একটি নতুন তত্ত্ব। ‘পুরো মহাবিশ্ব সৃষ্টির নেপথ্যে কাজ করছে ব্ল্যাক হোল’ এই তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে লাগলেন তিনি।
গবেষণা চালানোর সময় ছুটিতে বাড়িতে আসতে গিয়ে হকিং দুর্বল হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। এতে তার মুখে আঘাত লাগে। হকিংয়ের বাবা ফ্রাংক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার এটিকে কেবল শারীরিক দুর্বলতা হিসেবে উড়িয়ে দেন। কিন্তু একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে। তখন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে হকিংয়ের শরীরে মোটর নিউরন রোগ ধরা পড়ে। এ রোগে শরীরে শিরা উপশিরা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
ধীরে ধীরে পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়ে পড়ে। তখন কোন কোন ডাক্তার হকিংয়ের আয়ু আর মাত্র ২ বছর আছে বলে ঘোষণা দেন। কেউ কেউ আরো কম বলে। কিন্তু ২১ বছর বয়সী হকিং এই কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, পৃথিবীতে বাঁচতে তার আরো ৫০ বছর আয়ু আছে।
এসময় হকিং হাটাচলার করতে গিয়ে হরহামেশাই সমস্যার সম্মুখীন হতেন। একটা সময় তিনি লেখাপড়া ও গবেষণা দুইই ছেড়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু তার পিএইচডি সুপারভাইজার ডেনিস ও তার প্রেমিকা জেন তাকে সাহস যোগান। ১৯৬৪ সালে রয়েল সোসাইটির একটি সভায় ফ্রেড হোয়েল ও জয়ন্ত নারলিকারের একটা গবেষণাকে চ্যালেঞ্জ করলে হকিংয়ের ব্যাপারে সবার আগ্রহ তৈরি হতে থাকে।
হকিং বেঁচে থাকবেন না জানার পর জেন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু হকিং তাকে প্রত্যাখ্যাত করেন। কারণ হকিং চাচ্ছিলেন না, তার দুলতে থাকা জীবনে জেন আসুক। কিন্তু জেন ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসে তাদের বাগদান সম্পন্ন পরবর্তীতে তারা ১৯৬৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে রবার্ট, ১৯৭০ সালে লুসি এবং ১৯৭৯ সালে ইমোথি নামের তিনজন সন্তান তাদের ঘরে আসে।
বিয়ের পর, শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে হকিংয়ের। কিন্তু নিজের থিসিস চালিয়ে যান। রজার পেনরোজের করা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা করেন। পাশাপাশি জর্জ লেমিত্রে আর এডুইন হাবলের বৃহৎ বিস্ফোরণ আর আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে ভিত্তি হিসেবে ধরে তিনি তার থিসিস লেখা শুরু করলেন ১৯৬৫ সালে। এর নাম দেন Properties of extending universe অর্থ্যাৎ “প্রসারণশীল মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্যগুলো”। ১৯৬৬ সালে সেটাকে অনুমোদন দেয়া হলো। পেনরোজ স্বয়ং তার থিসিস কমিটিতে ছিলেন।
এর মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। হুইল চেয়ারে বাধা পড়েন হকিং।পিএইচডি শেষে তিনি কেম্ব্রিজে পেনরোজের সাথেই কাজ শুরু করলেন। ১৯৭০ সালে পেনরোজ এবং তিনি মিলে প্রমাণ করে দেখালেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড কোনো এক অনন্যতা(Singularity) থেকেই শুরু হয়েছে।
একই বছরে তিনি কৃষ্ণগহ্বর নিয়েও আরো কিছু কাজ শুরু করলেন। অন্য গবেষকদের সাথে মিলে কৃষ্ণগহ্বরের ক্রিয়াকৌশল নিয়ে চারটা নীতি উত্থাপন করলেন ১৯৭০ সালে। ১৯৭৩ সালে জর্জ এলিসের সাথে যুগ্মলেখক হিসেবে তিনি প্রথম বই প্রকাশ করলেন। নাম দিলেন – The Large Scale Structure of Space-Time. কিন্তু ১৯৭৪ সালে এসে তিনি নিজেই বললেন কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাপারে দেওয়া তার দ্বিতীয় নীতিটি ভুল।
তিনি বললেন, “কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হয়, এবং এটা ততদিন চলবে, যতদিন এটার শক্তি শেষ না হয়, যতদিন এটা বিকিরণ করতে করতে অদৃশ্য না হয়।” এই বিকিরণকে এখন হকিং বিকিরণ বা Hawking Radiation বলা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি প্রস্তাব করেন যে, বিকিরণ করতে করতে যখন কৃষ্ণগহ্বর অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন এর ভেতরের তথ্যগুলোও হারিয়ে যায়। কিন্তু তথ্য তো কখনো হারিয়ে যায় না। এর নাম দেওয়া হয় Blackhole Information Paradox.
কিন্তু ১৯৭৪ সালে এসে তিনি নিজেই বললেন কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাপারে দেওয়া তার দ্বিতীয় নীতিটি ভুল। তিনি বললেন, “কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরণ হয়, এবং এটা ততদিন চলবে, যতদিন এটার শক্তি শেষ না হয়, যতদিন এটা বিকিরণ করতে করতে অদৃশ্য না হয়।”
১৯৮৪ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ “A brief history of time – from big bang to black hole”-র খসড়া জমা দেন প্রকাশকের কাছে। কিন্তু দুর্বোধ্য ভাষার কারণে সেটাকে আবার এডিট করতে বলেন প্রকাশক। এর মধ্যে ১৯৮৫ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে, CERN এ গিয়েছিলেন হকিং । সেখানে গিয়ে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। তার স্বাস্থ্যের ভয়াবহ অবনতি ঘটে। তিনি কোমায় চলে যান।
লাইফ সাপোর্টে তিনি বেঁচে ছিলেন। এসময় তার শ্বাসনালী কেটে টিউব বসানো হয়। এরপর থেকে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখন তিনি কার্ডের মাধ্যমে কথা বলতেন। পরবর্তীতে Word Plus এর তৈরী সফটওয়্যার আর Speech Plus এর সহযোগীতায় তিনি স্পিচ সিনথেসাইজারের মাধ্যমে কথা প্রকাশ করতেন। এর ফলে তিনি মিনিটে ১৫টির মত শব্দ বলতে পারতেন।
এমন অবস্থাতেই সিনথেসাইজারের মাধ্যমে “A brief history of time – from big bang to black hole” কে প্রকাশকের মনমত লেখতে সক্ষম হন তিনি। পরে ১৯৮৮ সালে খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগানের ভুমিকার মাধ্যমে বাজারে আসে বইটি। আর তারপর বাকিটা সবার জানা। টানা ২৩৭ সপ্তাহ এই বইটি সানডে টাইমসের জরিপে বেস্ট সেলার হিসেবে ছিলো।
শারীরিক অসুস্থতা ও নানান বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯৫ সালে জেন আর হকিংয়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তবে জেন আর তাদের সন্তানদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক বজায় রাখেন। বিচ্ছেদের পর, ম্যাসনকে বিয়ে করেন হকিং। তবে ২০০৬ সালে ম্যাসনের সাথেও তার বিচ্ছেদ ঘটে। জেইন আগে একটা বই লিখেছিলেন, Music to Move the Stars. ২০০৭ সালে সেটার একটা পরিমার্জিত রুপ বের করেন, Travelling to Infinity: My Life with Stephen নামে। পরবর্তীতে এই বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে ২০১৪ সালে “Theory of everything” নামে একটি হলিউড সিনেমা তৈরী করা হয়। এই সিনেমাটি অস্কারসহ বিভিন্ন পুরষ্কারও জিতে নেয়।
অন্যদিকে আস্তে আস্তে হকিংএর পুরো শরীর অসাড় হয়ে যেতে থাকলো। ২০০৮ সালের দিকে, তার গ্র্যাজুয়েট এসিস্ট্যান্ট চশমায় ইনফ্রারেড লাগিয়ে গালের পেশীর নড়াচড়া দিয়ে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাও দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো। ২০১১ এর দিকে, মিনিটে ১৫টার জায়গায় ২টা শব্দে এসে ঠেকলো তার যোগাযোগের গতি।
তারপর তিনি ইন্টেলের শরণাপন্ন হলেন। ইন্টেল তাকে এমন একটি প্রযুক্তি দিলো যাতে কোনো শব্দ টাইপ না করতে হয়। বরং তিনি যাতে দেখানো শব্দগুলো থেকে দ্রত বাছাই করতে পারেন, তার গালের পেশী দিয়েই।
তার জীবনযাপন স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে অনেক ধরণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে। অনেক চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু শেষমেশ ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ তার জীবনের চাকা থেমে যায়। এইদিন ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহাকাশ রহস্যকে ভেদ করা এই সংগ্রামী মানুষটির জন্যে পাই ফিংগারস মোটিভেশনের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।