ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সংক্ষিপ্ত জীবনী

Author:

Published:

Updated:

ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি কে ? সম্ভবত বিভিন্ন কারণে উত্তরটি হবে পর্তুগালের কিংবদন্তী ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো । মেসি ভক্তরা এটা শুনে ক্ষেপে যেতে পারেন । তাই তাদের জন্য আমাদের বিশেষ উপহার মেসিকে নিয়ে আরও একটি লেখা , যা নিচের লিঙ্কে গিয়ে পড়ে আসতে পারেন । আপনার রাগ থাকবে না নিশ্চিত ।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলেন এবং পাশাপাশি তিনি পর্তুগাল জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক । ছোট একটি শহরের এক মালির ছেলে ছিলেন রোনালদো । যিনি কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ নিজেকে এমন এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন । যেখানে আরোহণ করা যেকোনো খেলোয়াড়ের সারা জীবনের স্বপ্ন থাকে ।

ছোট একটি শহরের এক মালির ছেলে ছিলেন রোনালদো ।

cristiano ronaldo

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বর্তমান সময়ে সবচেয়ে পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড় । আজ তার আলিসান বাড়ি, কোটি টাকা দামের গাড়ি আছে । কিন্তু এই মানুষটি একটা সময়ে থাকতেন টিনের তৈরি একটি ছোট্ট বাড়িতে । খুব কম মানুষই জানে, এমনকি তার ভক্তদের মধ্যে অনেকেই হয়ত জানেন না, একটা সময়ে কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে তিনি গেছেন ।

রোনালদোর পুরো পরিবার ছোট একটা টিনের ঘরে থাকতো ।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ সালে পর্তুগালের মাদেইরাতে জন্মগ্রহণ করেন । পুরো নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস স্যান্তোস এভেইরো । তার বাবা জোসে দিনিস আভেইরো ছিলেন মালি, যিনি পার্ক ও মাঠের পরিচর্যা করে পরিবার চালাতেন । রোনালদোর পরিবারে সে ছাড়া বড় এক ভাই ও দুই বোন আছে । রোনালদোর পুরো পরিবার ছোট একটা টিনের ঘরে থাকতো ।

cristiano ronaldo as a kid

খুব অল্প বয়স থেকে ফুটবল শুরু তার । মাত্র আট বছর বয়সে প্রথমে “আন্দোরিনহা” নামে একটি অপেশাদার দলে তার ক্রীড়াজীবন শুরু হয়, যেখানে তার বাবা কাজ করতেন । রোনালদোর মা মারিয়া ডোলোরেস ছোটবেলায় তাকে ক্রাই বেবি বলে ডাকতেন, কারণ কোন ম্যাচ ভাল না খেললেই তিনি মাঠে বসে কান্নাকাটি করতেন । এখনো অবশ্য এই প্রচলনটি রয়ে গেছে, তার দলের অন্য খেলোয়াড়রা তাকে মজা করে এই নামে ডাকেন ।

রোনালদোর যখন ১৫ বছর বয়স তখন এক মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তার হার্টে সমস্যা আছে । তাকে বাঁচতে হলে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিতে  

cristiano ronaldo

১৯৯৫ সালে, দশ বছর বয়সের মধ্যেই পর্তুগালে তার সুনাম ছড়াতে থাকে । মাদিয়েরার শীর্ষ দুটি দল “সিএস মারিতিমো”“সিডি ন্যাশিওনাল” তাকে পেতে উম্মুখ ছিল । অপেক্ষাকৃত বড় দল মারিতিমো আন্দোরিনহার ব্যবস্থাপকের সাথে একটি মিটিং-এ অংশ নিতে পারেননি । ফলে সিডি ন্যাশিওনাল রোনালদোকে হস্তগত করে । ন্যাশিওনালের হয়ে সে মৌসুমে শিরোপা জেতার পর স্পোর্টিং দলের সাথে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন ।

বাবা মারা যাবার পর মা অন্যদের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতেন ।

কিন্তু রোনালদোর যখন ১৫ বছর বয়স তখন এক মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তার হার্টে সমস্যা আছে । তাকে বাঁচতে হলে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিতে হবে বলে ডাক্তার পরামর্শ দেন । তখন তার সামনে মাত্র দুইটি পথ খোলা ছিল- হয় ফুটবল ছেড়ে দাও, নাহয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হার্টের সার্জারি করাও । তার জন্য ফুটবল ছাড়াটাই বেশি কঠিন ছিল বলে সে মৃত্যুর কথা না ভেবে হার্টের সার্জারি করালেন এবং সৌভাগ্যক্রমে সার্জারি সফল হয় ।

cristiano ronaldo

তিনি আবার খেলায় ফিরে আসেন । এবার এক নতুন শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজের স্বপ্নকে সফল করতে । কিন্তু এরপরই আরও এক কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেন তিনি । তার সবচেয়ে কাছের মানুষ, সবচেয়ে প্রিয়, বাবা অতিরিক্ত মদ খাওয়ার কারণে মারা যান । বাবার মৃত্যু রোনালদোকে অনেক বেশি ভেঙ্গে দেয় । কারণ, তার জীবনে বাবা এমন একজন বন্ধু ছিলেন যার সাথে সে সব কথা শেয়ার করতে পারত । সেই থেকে রোনালদোকে প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি নিজে কখনো মদ ছুঁয়ে দেখবেন না । এবং তিনি প্রতিজ্ঞা রেখেছেন ।

নেইমারের সংক্ষিপ্ত জীবনী

বাবা হঠাৎ মারা যাবার পর তাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হতে লাগল । তখন তার মা অন্যদের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতেন । তার একসাথে যে এতোগুলো সঙ্কট যাচ্ছে, রোনালদো তাতে বিন্দুমাত্র আশা হারাননি । সব সঙ্কটকে একপাশে সরিয়ে রেখে, নিজেকে সে কেবলমাত্র একটা জায়গাতেই কেন্দ্রিভুত করেন । একজন দক্ষ ফুটবলার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন । রোনালদো ১৭ বছর বয়সে পর্তুগাল স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন । ম্যাচটি ছিল লিবান ক্লাবের সাথে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের ।

রোনালদোর মা মারিয়া ডোলোরেস ছোটবেলায় তাকে ক্রাই বেবি বলে ডাকতেন, কারণ কোন ম্যাচ ভাল না খেললেই তিনি মাঠে বসে কান্নাকাটি করতেন ।

cristiano ronaldo

এই ম্যাচে অ্যালেক্স ফার্গুসনের রোনালদোর খেলা দেখেই সাথে সাথে তাকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলার চুক্তি করেন । তখন রোনালদোকে নেওয়ার জন্য এই ক্লাবটি ১৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করে । এটা ইংলিশ ফুটবল ক্লাবের ইতিহাসে কোন নতুন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়কে দেওয়া সবচেয়ে বড় পারিশ্রমিক । রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আগস্ট ২০০৩ থেকে মে ২০০৯ পর্যন্ত খেলেন । এই সময়ে তিনি ১৯৬ ম্যাচে ৮৪টি গোল করেন ।

তারপর ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব ১৩২ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে রোনালদোকে দোলে নেয় । রিয়াল মাদ্রিদের এই চুক্তি ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত । তাই নতুন চুক্তিতে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২৫ মিলিয়ন ডলারে আরেকটি চুক্তি হয় । নতুন এই চুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদোর নাম উঠে গেছে ।

cristiano ronaldo

শুধু এমন না যে এই টাকা দিয়ে রোনালদো নিজের ব্যাংক ব্যাল্যান্স করছেন, সম্পদ বাড়াচ্ছেন । ররং তিনি এই টাকা থেকে একটা বড় অংশ খরচ করছেন সামাজিক উন্নয়নে । একবার তিনি ১০ মাসের এক শিশুকে বাঁচানোর জন্য প্রায় ৭৯ হাজার ডলার খরচ করেন । রোনালদো প্রতিবছর দুইবার রক্তদান করেন, তাই সে তার শরীরে কোন ট্যাটু করান না । ফুটবল খেলা ছাড়াও তিনি একজন ভালো বাস্কেট বল খেলোয়াড় ।

কী শিখলেন রোনালদোর জীবন থেকে?

অনেকেই ভাবছেন ওর এতো এতো টাকা ! কিন্তু একটিবার মূল্যায়ন করে দেখুন একজন মানুষ রোনালদোকে । নিজের স্বপ্ন পূরণে কতটা মরিয়া ছিলেন তিনি, কতটা পরিশ্রমী রোনালদো? কি দুঃসহ কঠিন সময় তারও ছিল?

বড় হতে হলে, সবার আগে একজন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন ।

cristiano ronaldo

সবার আগে অন্য একটি ব্যাপারে একটু লক্ষ্য করুন । একজন মানুষ এমনি এমনি বড় হয় না । সবার আগে যেটা প্রয়োজন, তাকে মানবিক হতে হবে । সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন মনের মানুষ । এটা কেন্দ্র । এখান থেকেই তৈরি হয়, স্বপ্ন, ইচ্ছাশক্তি, ভালোবাসা, সংকল্পের দৃঢ়টা, কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা । বড় হতে হলে, সবার আগে একজন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন ।

আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন । অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, সফলতার সূত্র এবং জীবনের নানান সমস্যা আপনাদের পাশে আছে পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন । আর আগামী পর্বে আপনি কোন বিষয়ে লেখা চান কমেন্ট করে জানান । ভাল থাকুন ।

চাইলে এই গতি দানবকে নিয়ে আমাদের বানানো  ভিডিওটি দেখতে চলে আসুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে । ভালো লাগলে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না যেনো ।

লিংক ঃ https://youtu.be/WWUW1n7_6mQ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Latest Posts

  • ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

    ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

    ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করাকে এককথায় ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। খুব সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং কি এর সংজ্ঞাটা দেওয়া হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এতোটাও সহজ কিছু না। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কীভাবে করে? ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা কি, অসুবিধা কি, ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা হিসেবে কেমন- এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে…

    Read more

  • জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    জাকারবার্গ এবং ফেসবুকের গল্প | কীভাবে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন

    বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা অনেকেই মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসবুকের গল্প জানি । একটি ছোট্ট রুম থেকে সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে সকল ভাষাভাষী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসকে বদলে দিয়েছে ফেসবুক । কি ভাবে মার্ক জাকারবার্গ করলেন এটা ? আপনি কি জানেন জাকারবার্গকে তার স্বপ্নের জন্য কি কি ত্যাগ করতে…

    Read more

  • বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    বিয়ার গ্রিলসের হার না মানা গল্প

    ডিসকভারি চ্যানেলে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি দেখেননি এমন লোক কমই পাওয়া যাবে । অনুষ্ঠানটি যার কারণে সারা বিশ্বে এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে তিনি হচ্ছেন এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস (Bear Grylls) । সবার কাছে বিয়ার গ্রিলস নামেই পরিচিত। তিনি একাধারে একজন লেখক, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, সাবেক সেনা কমান্ডো ও বর্তমানে বিশ্ব স্কাউট সংস্থার চীফ অব স্কাউট ।…

    Read more