আজ এমন একজনকে নিয়ে বলবো, যিনি শূন্য থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায় । তিনি বলিউড অভিনেতা মার্ক ওয়েলবার্গ ।
জন্ম, দরিদ্র এক ড্রাইভার বাবার ঘরে । ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটনের সাথে নিত্য যুদ্ধ করে বেড়ে উঠা শুরু । শিশুটি হয়ত সে বয়সে বেঁচে থাকার সংগ্রামকেই ভেবে নিয়েছিল জীবন । তার চোখে দেখা জীবনের ভয়াবহতার বাইরে অন্য কোন পৃথিবী থাকতে পারে, এমনটা ধারনাও ছিল না ।
স্কুল হারানোর পর মার্ক ওয়েলবার্গ এর নতুন ঠিকানা হয় রাস্তার অলিগলি ।
মার্ক ওয়েলবার্গ স্কুলেও ভর্তি হয়েছিলো, কিন্তু ১৩ বছর বয়সে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয় । তাও তো একটা জায়গা ছিল, যেখানে নিজেকে মুক্ত পাখির মতো মনে করতে পারতো শিশুটি । কিন্তু স্কুল হারানোর পর তার নতুন ঠিকানা হয় রাস্তার অলিগলি ।
১৪ বছর বয়সে মার্ক মাদক বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ে সে । তার পেশা হয়ে দাঁড়ায় মাদক বিক্রির পাশাপাশি গাড়ি চুরি করা ।
এরপর যখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর, তখন একটি খুনের মামলার আসামী হয় সে । এই মামলায় তাকে কারাবরণও করতে হয়েছিল । কারাগারে থেকে এক অদ্ভুত অনুভূতির মুখোমুখি হয়েছিল সে । যার ব্যাপক প্রভাব ছিল পরবর্তী জীবনে ।
তার নিজের মুখেই সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনা যাক-
কারাগারে আমি তখন একজন খুনের আসামীর জীবনযাপন করছি । সময় কাটানোর মতো অন্য কিছু ছিল না বলে সারাদিন এটা সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতাম । হঠাৎ আমি আবিস্কার করলাম, আমি আমার এ জীবনকে ভীষণ অপছন্দ করছি । তখন আমার মাথায় এক নতুন চিন্তা চলে আসে ।
দিনরাত মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে একটি কথা- যেহেতু আমি এমন জীবন চাই না, তাই কারাগারই হবে আমার জীবনের শেষ নিষিদ্ধ অধ্যায় ।
১৪ বছর বয়সে তার পেশা হয়ে দাঁড়ায় মাদক বিক্রির পাশাপাশি গাড়ি চুরি করা ।
আমার অনুভূতি ছিল এমন যে, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছি । এর চেয়ে নিচে আর কোন জায়গা নেই ।
সুতরাং আমি জীবন নিয়ে একটি নতুন প্রতিজ্ঞা করি যে, আমাকে জীবনে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করতে হবে । আমি একজন সম্মানিত মানুষ হতে চাই ।
কারাগার থেকে মুক্তির পরপরই আমি প্রথমে এক অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি হই । আমাকে আবারো আমার সেই নিষিদ্ধ পথের বন্ধুদের কাছেই যেতে হয় ।
আমি তাদের গণ্ডির বাইরে কোনভাবেই বের হতে পারছিলাম না । আমার ভেতরে অন্য মানুষ, আর বাইরে ওদের সাথে ওদের মতোই একজন ।
যেহেতু আমি এমন জীবন চাই না, তাই কারাগারই হবে আমার জীবনের শেষ নিষিদ্ধ অধ্যায় ।
কিন্তু আমি সবসময় ভাবতাম, আমি কখনোই ওদের মতো না । ওদের মতো হয়ে থাকতে চাই না ।
আমার সময় এল নিজেকে পরিবর্তনের । নিজেকে অন্য মানুষে রূপান্তর করার ।
আমি আমার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভেবেছি- ওদের সঙ্গ আমাকে ছাড়তে হবে । একপর্যায়ে বন্ধুদের দৃঢ়ভাবে জানালাম, আমি তোমাদের সাথে আর থাকবো না । আমি চিরদিনের জন্য তোমাদের সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছি ।
আমার এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই ওরা আহত হয় । আমি বোঝানোর চেষ্টা করলে ওরা ক্ষেপে যায় । আমার সাথে ওদের প্রচণ্ড মারামারি বাঁধে তখন ।
তারপর আমি মুক্ত হলাম । আমাকে নতুন করে বাঁচতে হবে । তারপর থেকে শুরু হল আমার নতুন যাত্রা ।”
নিজের অন্ধকার সময়ের কথা বলতে গেলে এভাবেই বলেন মার্ক ওয়েলবার্গ
তার নতুন জীবন শুরু হল । প্রথমে সে গানের জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে থাকে । তার শ্রমের মুল্যও ফেরত আসতে শুরু হল । সে একটু একটু করে জনপ্রিয়তা পেতে আরম্ভ করে । কিন্তু তার জীবনের সংগ্রাম তো শেষ হয়নি এখনো ।
মানুষের জীবনের প্রতিটি দিনই দ্বিতীয় সুযোগ ।
যখন সে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে, তখনই সাংবাদিকরা তার অন্ধকার অতীত নিয়ে পত্রিকায় একের পর এক সংবাদ প্রচার করে তার জীবনকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করে দিল ।
এর ফলে তার যতটুকু সম্ভাবনা ছিল, সবটুকুই শেষ হয়ে গিয়ে ক্যারিয়ার প্রায় ধ্বংসের মুখে ।
কিন্তু এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরও, মার্ক একটুও পিছু হাঁটেনি । সে অন্য পথের সন্ধান করতে থাকে ।
তারপর জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো নতুন কিছু করার সুযোগ পেয়ে যায় সে । সেখানে নিজেকে পুরোপুরি নিমজ্জিত করে ফেলল । তার সমস্ত প্রতিভা অভিনয়ের পেছনে ঢেলে দিতে থাকলো সে ।
শ্রমের এই ধারাবাহিকতার বিনিময়ে সে ছোট একটি স্বপ্নকে নিয়ে গেল “ট্রান্সফরমার” “টেড” এবং ”দ্যা ইটালিয়ান জব” এর মতো বড় বড় সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের সাফল্যে ।
অবশেষে তার জীবনের বহুল প্রতীক্ষিত সেই সম্মান এলো । তিনি জয় করলেন পুরো পৃথিবী ।
বলছি মার্ক ওয়ালবার্গের কথা । বর্তমানে মার্ক ওয়ালবার্গ এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন ।মার্কের জীবনের গল্প আমাদের এটাই শেখায় যে, যদি জীবনে দ্বিতীয় কোন সুযোগ আসে, এটাকে যেন নষ্ট করে না ফেলি ।
মানুষের জীবনের প্রতিটি দিনই দ্বিতীয় সুযোগ ।
একাডেমি পুরস্কার মনোনীত এবং বাফটা পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা, প্রযোজক এবং র্যাপার মার্ক ওয়ালবার্গ । অভিনয় জীবনের প্রথম দিকে মার্কি মার্ক নামে পরিচিত ছিলেন। “মার্কি মার্ক অ্যান্ড দ্য ফাংকি বাঞ্চ” নামক ব্যান্ড দলের সাথে র্যাপ শিল্পী হিসেবে যোগ দেয়ার মাধ্যমেই ১৯৯১ সালে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল তার ।
ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী রিয়া ডারহ্যামের সঙ্গে তার সংসারে আছে চার সন্তান এলা (১০), মাইকেল (৮), ব্রেন্ডন (৫) ও গ্রেস (৪)।
২০১৫ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন অনুসারে তার আয় ২২৫ মিলিয়ন ডলার। মুভি থেকে এক বছরে সর্বোচ্চ আয়: ২৮ মিলিয়ন ডলার
বিখ্যাত মুভিঃ শুটার, ফোর ব্রাদার্স
সবচেয়ে পারিশ্রমিক পাওয়া মুভিঃ ট্রান্সফরমার: এইজ অফ এক্সটিঙ্কশন (১৭ মিলিয়ন ডলার)
সবচেয়ে ব্যবসাসফল মুভি: ট্রান্সফরমারঃ এইজ অফ এক্সটিঙ্কশন (১,১০৪,০৫৪,০৭২ ডলার)
মুভি সহ অন্যান্য উৎস থেকে বছরব্যাপী আয়ঃ ২২৫ মিলিয়ন ডলার ।
আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন । অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, সফলতার সূত্র এবং জীবনের নানান সমস্যা আপনাদের পাশে আছে পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন ।
মার্ক ওয়েলবার্গকে নিয়ে আমাদের বানানো নিচের ভিডিওটি দেখুন । এবং আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সে জানান ।
সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।