দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
বাস্তব জীবনে বিভিন্ন কারণে আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি মানসিক চাপে থাকি । পারিবারিক সমস্যা বা কর্মক্ষেত্রে জটিলতা, কাছের মানুষের সাথে সম্পর্কের টানাপোডেন, অর্থনৈতিক সঙ্কট, স্বাস্থ্যের অবনতি, এমনকি তারচেয়েও বড় ক্রাইসিস কাছের কোন মানুষের মৃত্যু ।
এই সমস্যাগুল থেকে সৃষ্টি হওয়া দুশ্চিন্তায় যে কার স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে । বেড়ে যেতে পারে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি । তাই সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত জরুরি । গবেষকরা বলছেন, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতির অন্যতম কারণ ।
চেষ্টা করুন হাসিখুশি থাকতে, এতে করে ম্যাজিকের মতো কমে যেতে থাকবে আপনার মানসিক চাপ ।
দুশ্চিন্তা, ঠিকমত পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়ামে অনিহার ফলে যে ধরণের শারীরিক ঝুঁকি থাকে, ঠিক একই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন মানসিক চাপের কারণে ।
আর এই সমস্যাগুলো এমন যে আপনি চাইলেই, চাপমুক্ত থাকতে পারবেন না । আপনাকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে । এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা পরামর্ষ দেন, মানসিক চাপ দূর করতে বন্ধু, পরিবার বা ঘনিষ্ঠজনদের সাহায্য নিন ।
প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা খুব জরুরী । পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশনের এই পর্বে আমরা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি সহজ ও কার্যকরী উপায় নিয়ে হাজির হচ্ছি আমাদের জন্য ।
১. প্রাণ খুলে হাসুন
হাসার চেষ্টা করুণ । আপনি নিজেই জানেন কে বা কি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতে পারে । যদি আপনি কমেডি মুভি পছন্দ করেন তাহলে সময় করে মুভি দেখুন । যেখানেই হাসির সামান্য উপলখ্য তৈরি হবে, সেখানেই প্রাণ খুলে হাসুন ।
আপনি যদি ২৫ মিনিট করে টানা তিনদিন ঠিকমতো মেডিটেশন করতে পারেন, তাহলে আপনার হতাশা বা দুশ্চিন্তা অনেকখানিই কমিয়ে ফেলা সম্ভব ।
আপনার যে বন্ধু অথবা কাছের মানুষ সবচেয়ে বেশি হাসাতে পারে আপনাকে, তার কাছে যান । জমিয়ে আড্ডা দিয়ে হাসুন । আপনি অতীতের মজার মজার ঘটনাগুল মনে করে হাসুন । কেন এতো হাসির কথা বলছি? কারণ উচ্চস্বরে হাসলে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অক্সিজেন প্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায় । আর এতে করে ম্যাজিকের মতো কমে যেতে থাকবে আপনার মানসিক চাপ ।
২. আপনার কাছের বন্ধুর সাথে সমস্যা নিয়ে কথা বলুন
সমস্যার কথা কাছের বন্ধুর সাথে শেয়ার করলে কোন সমাধান দিতে পারুক বা না পারুক অন্তত সে আপনাকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করবে । এতে দুই ধরণের সুবধা পাবেন আপনি । প্রথমত, কারো সাথে শেয়ার করার ফলে আপনার এতদিনের জমে থাকা কথাগুলো বলে ফেলে কিছুটা হলেও নিজেকে ভারমুক্তির অনুভুতি পাবেন । আর অন্যদিকে আপনার এই খারাপ সময়ে একজন মানুষেও যদি পাশে থাকে সেটাও আপনার জন্য অনেক ।
আপনি ঠাণ্ডা মাথায় ভাবার সুযোগ পাবেন । যাদের বন্ধু সংখ্যা বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধাটাও বেশি পাওয়া যায় । তবে এমন কোন বন্ধুকে আপনার সমস্যার কথা জানানো থেকে বিরত থাকুন, যে আপনাকে বুঝতে পারে না । যে আপনাকে নিয়ে বরং ঠাট্টা-তামাশা বা উপহাস করবে ।
৩.মেডিটেশন
মেডিটেশন মানসিক সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় ঔষধ । নিয়মিত মেডিটেশন করা মানুষ পরিস্থিতি বুঝে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে পারে । মেডিটেশন হচ্ছে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা চর্চা । মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি যেমন নিজেকে বুঝতে পারবেন, নিজের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর দিকেও মনযোগী হতে পারবেন ।
নিজেকে যতটুকু সম্ভব ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুণ ।
মনের সাথে তৈরি হবে একটি শক্তিশালী বন্ধন । যার মাধ্যমে সচেতনভাবেই আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি অর্জন করতে পারবেন । একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আপনি যদি ২৫ মিনিট করে টানা তিনদিন ঠিকমতো মেডিটেশন করতে পারেন, তাহলে আপনার হতাশা বা দুশ্চিন্তা অনেকখানিই কমিয়ে ফেলা সম্ভব ।
৪.নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
নিজেকে যতটুকু সম্ভব ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুণ । ব্যস্ততা আপনাকে একমুখী করে ফেলবে । আপনি কাজের ভেতর ডুবে যাবেন । তখন আপনার মস্তিষ্ক কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে । মস্তিষ্ক ও হাত একই সাথে ব্যস্ত রাখা যায় এমন কোন কাজ করুণ- যেমন গেইম খেলা ।
চাপ কমাতে মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে জোরে অনেকক্ষণ ধরে শ্বাস নিন । এতে মানসিক চাপের হরমোন ‘কর্টিসল’ ধ্বংস হয়ে যাবে । শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বেড়ে যাবে । আপনি নিজেকে হালকা অনুভব করতে পারবেন ।
৫.পরিস্থিতিকে মেনে নিন
সবকিছু সব সময় আপনার পক্ষে নাও থাকতে পারে- এই ব্যাপারাটিকে মেনে নিন । অযথা নেতিবাচক চিন্তা করে নিজের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন না । ভেবে দেখুন, আপনি যে সমস্যায় পড়েছেন তার থেকেও বড় বড় সমস্যা থেকে মানুষ উঠে এসেছে ।
মানুষকে ক্ষমা করতে শিখুন ।
আপনি যে সমস্যা আছেন একই এর চেয়েও বড় সমস্যায় আছে অন্য কেউ । তাই যেটা আপনার অনুকূলে যায়নি, সেটাকে মেনে নিয়েই সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়ান । নিজের ভেতর সাহসী মনোভাব তৈরি করুণ । একটি ছোট উদাহরণ দেই, ধরুন আপনি জ্যামে আটকে আছেন অনেকক্ষণ ধরে । অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে, বসের কথা শুনতে হবে এসব ভেবে অযথাই নিজের উপর চাপ নিচ্ছেন ।
তারচেয়ে বরং ভাবুননা, যে জ্যামে তো শুধু আপনি নন । আপনার মতো অনেকেই জ্যামে আটকে আছেন, হয়ত আপনার চেয়েও জরুরী কাজ পড়ে আছে তার । তাই আপনার সমস্যাকে মেনে নিন । দেখবেন চাপ অনেকটাই কমে গেছে । আর একই সাথে নিজের মধ্যে একটি সচেতন পরিবর্তন আসবে যে, পরের দিন আপনাকে আরও আগে বাসা থেকে বের হতে হবে ।
৬. ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন
মনের মধ্যে ক্ষোভ জমিয়ে রাখা মোটেও আপনার জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে না । ক্ষোভ দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সৃষ্টি করে । যেটা আপনার সমস্যা বাড়াবেই । ক্ষোভের প্রভাব যেমন মানসিকভাবে আপনার মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করবে, তেমননি শারীরিকভাবেও আপনার বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে ক্ষোভ ।
ক্ষোভের কারণে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় অনেকগুন । তাই মানুষকে ক্ষমা করতে শিখুন । ক্ষমা আপনাকে একজন উদার ও ইতবাচক দৃস্তিভঙ্গির মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে । জীবনে চলার পথে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে ।
৭. প্রকৃতির সাথে সময় কাটান
প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক নিবিড় । একটু খেয়াল করলে দেখবেন যেদিন প্রচণ্ড গরম সেদিন এমনিতে আপনার মন মেজাজ একটু খারাপ থাকে । আবার খুব ভাল সুন্দর আবহাওয়া থাকলে তুলনামুলকভাবে সেদিন আপনার মন অন্য দিনের চেয়ে ভাল থাকে । তাই শত ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহে একদিন দূরে কোথাও ঘুরে আসুন । নিজেকে হালকা লাগবে ।
৮. ব্যায়াম করুণ
যেকোনো ধরনের হালকা ব্যায়াম আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে চাপমুক্ত করতে পারে । আর হালকা ব্যয়ামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো হাঁটা । মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে বাসার আশেপাশে অথবা খোলা কোন মাঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন । ব্যায়াম দেহে সেরেটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ।
এতক্ষণ শুনলেন চিন্তামুক্ত থাকার কিছু সহজ ও কার্যকরী টিপস । আপনিও কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার সমস্যার কথা ।