নিক ভুজিচিচের হার না মানা গল্প
বিশ্বাস করুণ, এই মুহূর্তে আপনি পৃথিবীর অতি ভাগ্যবানদের মাঝে একজন। আজকে পৃথিবীতে এক বিলিয়ন মানুষের বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে , আপনি আগের বাক্যটি শুনতে শুনতে একজন মানুষ সুইসাইড করে ফেলেছে, পৃথিবীতে ১২০ মিলিয়নের বেশি দাসী এখনও অত্যাচারিত হচ্ছে । সৃষ্টিকর্তার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এই মানুষ গুলোর মাঝে আপনার নামটি নেই।
অসংখ্য মানুষ তাদের অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে থাকে কিন্তু যতক্ষণ তিনি তোমার জন্য যা করেছেন তার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট না হতে পারবে ততক্ষণ তুমি জানতে পারবে না সে আসলে ইতিমধ্যে তোমার জন্য কি করে রেখেছে। এই বাক্যটিই আমাকে মুক্ত করেছে এবং আমাকে বিশ্বাস করার একটি জায়গা দিয়েছে।
আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক প্রশ্ন ছিল। যদি সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভালবাসবে তাহলে আমাকে কেন এভাবে সৃষ্টি করেছেন ? যদি সে আলৌকিক কিছু করতে পারে এবং আমি যা চাব তাই আমাকে দিতে পারবে তাহলে সে কেন আমাকে হাত এবং পা দেয়না যখন আমি তার কাছে কষ্ট দুর করার জন্য প্রার্থনা করি?
আমার মনে হত সৃষ্টিকর্তা কোন কারনে আমার প্রার্থনা শুনছে না এবং আমি বিশ্বাস করতে শুরু করলাম তার অস্তিত্ব বলে কিছু নেই।
সেই সময়টা পার করা সত্যই খুব কঠিন ছিল বিশেষ করে যখন আমার বয়স ৮-১২ এঁর মাঝে ছিল। আমি সম্ভবত প্রথম স্পেসাল চাইল্ড ছিলাম যে কিনা মূলধারার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে কোন হাত পা না থাকা স্বত্তেও । হাত পা না থাকায় আমার প্রতি মানুষের প্রচুর অপ্রয়োজনীয় মনোযোগের কারনে বিষণ্ণতায় ডুবে থাকতাম আর তার সাথে ছিল একাকীত্ব।
১০ বছর বয়সে আমি আমাদের পারিবারিক বাথটাবে সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম সারাদিন মানুষের হাসিঠাট্টা এবং উত্যক্ততা সহ্য করতে না পেরে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে তৃতীয়বার চেষ্টা করার সময় আমি অনুভব করলাম আমার মা-বাবা আমার কবরের সামনে কাঁদছে এবং আমি কতটা ব্যথা তাদের জন্য রেখে যাচ্ছি।
আমি বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম যদিও আমি প্রচণ্ড ডিপ্রেশনের মধ্যে ছিলাম কারন আমার মনের কথা বোঝার মত কেউ ছিল না। কোন অর্থ নেই, বন্ধু নেই এমনকি বিশেষ কোন জ্ঞানও নেই যেখান থেকে বিশেষ কোন উদ্ধৃতি আমি নিজেকে শান্ত করার জন্য শুনাতে পারি।
অবশেষে ১৫ বছর বয়সে সৃষ্টিকর্তা আমার প্রাথনায় সারা দেন। যখন আমি জন নবম অধ্যায়ে একটি ঘটনা জেনেছিলাম। একজন মানুষ অন্ধ হয়ে জন্মেছিল, এমন একটি অক্ষমতা যা ব্যাখ্যা করা যায় না কিন্তু এই অনুভূতিটি আমার কাছে খুব পরিচিত ছিল। মানুষ যখন যিশুকে প্রশ্ন করেছিল তাকে কেন অন্ধ বানান হয়েছে , তখন তিনি বললেন তার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাজ প্রকাশিত হবে এবং এটা শোনার পড় থেকে আমার মাঝে বিশ্বাস জন্ম নেয়। বিশ্বাস একটি বিশেষ উপহার যা আপনার মাঝে নিজেকে জাগানোর জন্য কাজ করবে । আর সৃষ্টিকর্তার এই প্রতিশ্রুতি আমার জীবন বদলে দিল।
হ্যা। এই কথাগুলো নিক ভুইচিচের কথা। একজন হাতপা বিহীন মানুষ। অথচ আজ পৃথিবীর কয়েক বিলিয়ন মানুষকে অনুপ্রেরনা যুগিয়ে যাচ্ছেন, সে দুটি প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার, একটি প্রফিটেবল এবং আরেকটি নন প্রফিটেবল। তিনি একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন যা ৩০ টি এওয়ার্ড পেয়েছে এবং তিনি হয়েছেন বেষ্ট অ্যাক্টর।
তিনি মিউজিক ভিডিও করেছেন, এ পর্যন্ত আটটি বই লিখেছেন এবং তার প্রথম বই Life without limits ৩০ টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং ৮ লক্ষ এর বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
মনে আছে, শুরুতে বলেছিলাম এই মুহূর্তে আপনি পৃথিবীর অতি ভাগ্যবানদের মাঝে একজন। তাই সৃষ্টি কর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখুন। আপনাকে সৃষ্টি করার কারন খুজে বের করুণ, আপনি কোন কাজটি সবচে ভাল করতে পারেন সেটি খুজে বের করুণ এবং নিজেকে ছড়িয়ে দিন। সফলতা কেবল আপনার জন্যই।
Leave a Reply