বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা অনেকেই মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসবুকের গল্প জানি । একটি ছোট্ট রুম থেকে সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পরে সকল ভাষাভাষী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসকে বদলে দিয়েছে ফেসবুক ।
কি ভাবে মার্ক জাকারবার্গ করলেন এটা ?
আপনি কি জানেন জাকারবার্গকে তার স্বপ্নের জন্য কি কি ত্যাগ করতে হয়েছিলো? আজকের এপিসোডে আমরা নিয়ে এসেছি ফেসবুকের ত্যাগ ও সফলতার গল্প নিয়ে।
সফলতার জন্য আপনাকে কত কঠিন সিদ্ধান্ত ও কত বিশাল ত্যাগের মধ্য দিয়ে যেতে হবে তা আপনি আজ জানতে পারবেন ।
পড়ুন, জানুন মার্ক জাকারবার্গের সংগ্রামের জীবনী
২০০৪ সাল। মার্ক ফেসবুক চালু করেন । কিন্তু ২০০৫ সালেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্যে পড়ে যান তিনি । বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড ত্যাগ করতে হবে অথবা সবকিছু বাদ দিয়ে Harvard University তে পড়াশুনা করতে হবে ।
তিনি হার্ভার্ড ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার ভাষায় “আমার ৫ মিনিট সময় লেগেছিল এই সিদ্ধান্তটি নিতে ।”
আমি খুব একা হয়ে পড়েছিলাম কারন সবাই ভেবেছিল আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি ।
কেবল এটাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিল না। ঠিক তার কিছু দিন পর, টেক জায়েন্ট ইয়াহু- ফেসবুকে কেনার অফার দেয় । যার মূল্য ১০০,০০০,০০০০ ডলার, (১০০ কোটি ডলার) । যা সে সময় হিসেবে অনেক বড় অংক।
কিন্তু মার্ক জুকারবারগ তার স্বপ্নের উপর আস্থা রাখেন এবং তিনি বিশ্বাস করেছিলেন ফেসবুকের ভ্যালু একদিন এর থেকেও বেশী হবে । তাই তিনি ফেসবুক বিক্রি করতে অসম্মতি জানান।
যদিও বিষয়টি নিয়ে তিনি পুরোপুরি সচেতন ছিলেন না । হয়ত তিনি তার ভালবাসার জায়গাটা অন্য কারো কাছে দিতে চাননি ।
মানুষ যাই বলুক না কেন, কখনও থামবেন না, নিজের স্বপ্নের উপর বিশ্বাস রাখুন, কাজ করুন, সফলতা কেবল আপনার জন্যই।
সে সময় মার্ক এর টিমে যারা কাজ করতেন তারা ভেবেছিল এটা মার্কের একটা ভুল সিদ্ধান্ত। বরং বিক্রি করাটাই ভাল সিদ্ধান্ত হত । কারন ইয়াহু তখন অনেক বড় কোম্পানি। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে ফেসবুক ম্যানেজমেন্টের বেশিভাগই ফেসবুক ছেড়ে চলে যায় ।
মার্কের ভাষায়,
“আমি খুব একা হয়ে পড়েছিলাম কারন সবাই ভেবেছিল আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি । আমি অবাক হই, যদি আমি ভুল করেই ফেলতাম? মাত্র ২২ বছরের একজন ! ভবিষ্যতে বিষয়গুলো কিভাবে কাজ করবে সেটা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনাও ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর পর এখন আমি বুঝতে পেরেছি কোন কোন বিষয়ে যদি খুব উচ্চ আকাঙ্ক্ষা/লক্ষ্য না থাকে তারপরও বিষয়টিকে নিয়ে কাজ করা যায় ।
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সেটাই যেটা সত্যিকার সুখ দেয় ।
আমার পছন্দের একটা গল্প বলি, জে এফ কেনেডি যখন নাসার স্পেস সেন্টারে গিয়েছিল, সেখানে একজন পরিছন্নতাকর্মীকে দেখলেন ঝাড়ু হাতে ! জিজ্ঞেস করলেন সে কি করছ ? পরিছন্নতাকর্মী উত্তরে বললেন যে, মহান রাষ্ট্রপতি, আমি একজন মানুষকে চাঁদে পাঠানোর জন্য কাজে সাহায্য করছি ।
উদ্দেশ্য/ লক্ষ্য হল এমন এক অনুভুতি, যেটা থাকলে মনে হবে আপনি আপনার থেকেও বড় / গুরুত্বপূর্ণ কিছুর জন্য কাজ করছেন । যেন এটা আপনার লাগবেই আর এই কাজটা আপনাকেই ভালো করে করতে হবে ।
যেখানে ব্যর্থতার স্বাধীনতা থাকে সেখানেই সাফল্য আসে ।
লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সেটাই যেটা সত্যিকার সুখ দেয় । জে কে রাউলিং Harry porter প্রকাশ করার আগে তার লেখা নিয়ে ১২ বার reject হয়েছেন । এমনকি বিয়নছি হেলো গানে সাফল্য পাবার আগে প্রায় ১০০ টা গান গেয়েছেন । যেখানে ব্যর্থতার স্বাধীনতা থাকে সেখানেই সাফল্য আসে ।
কারন, আইডিয়া কখনই পুরোপুরি তৈরি হয়ে আসে না , সেটা তখনই পূর্ণতা পাবে যখন আপনি সেটা নিয়ে অনেক অনেক কাজ করবেন । ”
মি. বিনের জীবনী ও সংগ্রামের গল্প পড়তে ক্লিক করুন এখানে
মার্কের উপরে সবাই আস্থা হারানোয় তিনি হতাশ হয়ে পরতে পারতেন। সেই কঠিন অবস্থায় মার্ক জাকারবার্গ তার কোম্পানি বন্ধ করে দিতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা করেননি । এই অনাস্থা তার ইচ্ছে এবং জেদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মার্ক জাকারবার্গ তার স্বপ্নের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন আর নতুন এক টিম গঠন করে আবারও কাজ শুরু করেছিলেন । আর আজ ফেসবুক সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তিনি বর্তমান বিশ্বের সেরা ৫ ধনী ব্যক্তির একজন ।
তার গল্প এটাই শেখায় – মানুষ যাই বলুক না কেন, কখনও থামবেন না, নিজের স্বপ্নের উপর বিশ্বাস রাখুন, কাজ করুন, সফলতা কেবল আপনার জন্যই।
Leave a Reply