ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করাকে এককথায় ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
খুব সহজে ডিজিটাল মার্কেটিং কি এর সংজ্ঞাটা দেওয়া হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং এতোটাও সহজ কিছু না।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কীভাবে করে? ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা কি, অসুবিধা কি, ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা হিসেবে কেমন- এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে চান, তাহলে আজকের এই ব্লগ লেখাটি আপনার জন্যই।
আমি আজকের লেখায় এমন কিছু বিষয় তুলে ধরবো যা বেশিরভাগ বাংলাদেশি ওয়েবসাইটগুলো খুঁজে পাবেন না।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কেন দরকার?
পৃথিবীর অন্যান্য কিছুর পরিবর্তনের মতো মার্কেটিংয়েও যুগে যুগে সময়ের সাথে সাথে এসেছে পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনটা বিশেষ করে সবসময় নির্ভর করে- যেখানে কাস্টমারদের আনাগোনা সেখানেই মার্কেটিং।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষকে একসাথে কোথায় বেশি পাওয়া যায়?
হাটে বাজারে? রাস্তাঘাটে? খেলার মাঠে? নাকি ফেসবুক ও ইউটিউবে?
আপনি নিঃসন্দেহে বলবেন- অবশ্যই ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমে।
মানে মানুষজন এখন সবচেয়ে বেশি একটিভ থাকে অনলাইনে বা ইন্টারনেটে। তাই ইন্টারনেটটাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম যেখানে আপনি হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষকে একসাথে পাবেন। আর এতোগুলো মানুষকে একসাথে যেখানে আমি পাবো, সেখানে কোন পণ্য বা সেবার যদি প্রচার বা প্রচারনা চালাই তাহলে নিশ্চিতভাবে অন্য যে কোন মাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি আমি কাস্টমার পাবো? তাই না?
ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটা মার্কেটিং প্রসেস যেখানে- ডিজিটাল মাধ্যম; যেমন ডিজিটাল ডিভাইস ও ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে কোন প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবার প্রতি সাধারণ মানুষজনের আগ্রহ তৈরি করে।
উদারহন- আপনি যদি ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারনা চালান তখন সেটা হবে ডিজিটাল মার্কেটিং। আপনি যদি ইউটিউবের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি সাধারণ মানুষজনের আগ্রহ তৈরি করেন তাহলে সেটাও একটা ডিজিটাল মার্কেটিং।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব-
নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে তুলে ধরা হল-
- বিশাল ব্যাপ্তি
- সুপার টার্গেট মার্কেট
- সাশ্রয়ী
- পরিমাপযোগ্য
- রিয়েল টাইম কাস্টমার এঙ্গেইজমেন্ট
- ব্র্যান্ড বিল্ডিং
- ফ্ল্যাক্সিবল
এবার বিস্তারিতভাবে বলা যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং সমুদ্রের মতো বিশাল
সমুদ্রের সাথে কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর তুলনা করলাম? খুব সাধারণ ডিজিটাল মার্কেটিং এতোই বিশাল যে এখানে আপনি কোথায় আছেন, কোথায় ব্যবসা করবেন এই বিষয়গুলো একেবারেই তুচ্ছ।
আপনি চাইলে বাংলাদেশের একটা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বসে পৃথিবীর বিশাল বড় বড় শহরে মার্কেটিং করে খুব সহজে আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারনা করে নিজের ছোট ব্যবসাকে একটা বিশাল বড় জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন।
এই কাজটা বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যে করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশীদের তৈরি বিভিন্ন ভাল ভাল সফটওয়্যার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ কিনে ব্যবহার করছে। কীভাবে? এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমেই। এখানে আপনি কোথায় থাকেন ম্যাটার করে না, ম্যাটার করে আপনি কোথায় বিসনেস করবেন সেটাই।
সুপার টার্গেট মার্কেট
ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশেষ কিছু বিষয় হচ্ছে-
এখন এই কাজগুলো একসাথে শুধু ডিজিটাল মার্কেটিংয়েই সম্ভব।
উপরের পয়েন্টগুলো বাংলাদেশের একজন প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটার সাইফুল্লাহ সাইফের কাছে থেকে নেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং সাশ্রয়ী
ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং প্রচণ্ড সাশ্রয়ী। আপনি ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং যেমন – টিভি / রেডিও / সংবাদপত্র ইত্যাদি মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে মার্কেটিং করতে যে পরিমাণ খরচ হবে তার চেয়ে অন্তত ১০ গুন কম খরচে ডিজিটাল মার্কেটিং করে অন্তত ১০ গুন বেশি ফলাফল নিয়ে আসতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এ।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- অনেক বড় বাজেট আপনার না থাকলেও আপনার অল্প বাজেট দিতেও শুরু করতে পারেন ডিজিটাল মার্কেটিং। উদারহরণস্বরূপ বলা যায়- আপনি চাইলে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়েও আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন শুরু করতে পারেন। যেটা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ প্রায় অসম্ভব।
ডিজিটাল মার্কেটিং ফলাফল সহজে পরিমাপযোগ্য
ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- খুব সহজেই মার্কেটিং পারফর্মেন্স পরিমাপ করা যায়। বিশেষ করে ডাটা ড্রিভেন ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটি মার্কেটিং প্রসেস যেখানে আপনি মার্কেটিং এর প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলবেন রিয়েল ডাটার উপর ভিত্তি করে। ফলে খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মার্কেটিং এফোর্ড ঠিক পথে যাচ্ছে নাকি ভুল পথে যাচ্ছে।
এই ফলাফল থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি আরও পরিপক্ক মার্কেটিং প্ল্যান করতে পারবেন।
রিয়েল টাইম কাস্টমার এঙ্গেইজমেন্ট
ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক বড় একটি সুবিধা হচ্ছে, আপনি ক্যাম্পেইন একবার লঞ্চ করলে সাথে সাথে বুঝতে পারছেন ক্যাম্পেইন কেমন যাচ্ছে। কীভাবে নিচ্ছে আপনার টার্গেট কাস্টমাররা।
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ এই বিষয়টা ছিল প্রচণ্ড জটিল এবং অনেকটা সবকিছু হারিয়ে তারপর বোঝা যেত এতোদিন যা করলাম, সেটা ভুল ছিল।
দ্বিতীয়ত আরেকটা বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং বাইডিরেকশনাল মার্কেটিং। মানে আপনি সরাসরি আপনার কাস্টমারদের ফিডব্যাক জানতে পারছেন।
আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রতি সাধারণ মানুষজনের চিন্তাভাবনা কি? তাদের প্রতিক্রিয়া কি?
এই বিষয়গুলো জেনে সেই অনুয়ায়ি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করাটা খুব সহজ হয়ে যায়।
ব্র্যান্ড বিল্ডিং
আপনার প্রতিষ্ঠান কত ছোট বা কত বড় ডিজিটাল দুনিয়ায় সেটা খুব একটা ম্যাটার করে না, যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং করাটা যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্যই অত্যন্ত সহজ তাই যে কোন ছোট প্রতিষ্ঠান একটু একটু করে মার্কেটিং করে নিজেদের ব্যবসাকে বড় করার সুযোগ এখানে অনেক।
যেকোন ছোট প্রতিষ্ঠান চাইলেই মার্কেটিং করে এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটিকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগটা এখন হাতের নাগালে।
ফ্ল্যাক্সিবল
ভাবতে পারেন, আপনি কোথাও ঘুরতে গেছেন কিন্তু সেখানেও বসেও আপনার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এর কাজ করছেন। ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন?
হ্যাঁ ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টাকে এতোটাই সহজ করে তুলেছে।
আপনি কোথায় আছেন? কোন সময়ে আছেন? কীভাবে আছেন? আপনার টিমে কতজন লোক আছে ইত্যাদি কোন কিছুই ম্যাটার করে না, ম্যাটার করে একমাত্র আপনি ক্যাম্পেইন করে আপনার প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন।
শেষকথা
আমরা জানি বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে একটা বাজওয়ার্ড। কিন্তু এটা কি সত্যি একটা বাজওয়ার্ড? এতক্ষনের আলোচনায় আশাকরি বিষয়টা খুব পরিষ্কার হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?
ডিজিটাল মার্কেটং এর গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। কেন ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং আশীর্বাদ হয়ে এসেছে সেটা আশা করি এতক্ষন কথায় বুঝতে পেরেছেন।
আজ এই পর্জন্তই। আগামীতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলবো।