ইলন মাস্কঃ মানবিক পৃথিবীর স্বপ্নদ্রষ্টা
যাকে নিয়ে আজকের ভিডিওটি তিনি একবিংশ শতাব্দীর এমন একজন শিল্পদ্যোক্তা, যিনি একইসাথে বেশ কয়েকটি সফল জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা । তাকে বলা হয়ে থাকে ইঞ্জিনিয়ারদের ইঞ্জিনিয়ার । বর্তমানে তিনি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের CEO এবং CTO । তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসেরও CEO এবং পণ্য প্রকৌশলী । সোলারসিটির চেয়ারম্যান ও পেপ্যালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা । এছাড়াও হাইপারলুপ নামে একটি কল্পিত উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক তিনি ।
‘মানবকল্যাণে বিজ্ঞান’’ এই ধারণা নিয়ে তিনি কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত । এতক্ষণে হয়ত আপনারা অনেকেই জেনে ফেলেছেন মানুষটি আর কেউ নয়- ইলন মাস্ক । তিনি সোলার সিটি, স্পেসএক্স এবং টেসলা মটর নিয়ে বলেন, “আমি যেসব জিনিস নিয়ে কাজ করি তাঁর পেছনে আছে একটি স্বপ্ন । আমার স্বপ্ন হল, এমন একটি পরিবর্তিত পৃথিবী, যা হবে আরও মানবিক।”
ইলন মাস্কের নতুন স্বপ্ন যেন কল্পনাকে হার মানাবে । তিনি চান, ভবিষ্যতে মানব জাতি টিকে থাকার সংগ্রাম মোকাবেলা করতে ভিন গ্রহে বসতি স্থাপন করবে । ইলন মাস্কের এই ভাবনাটি ‘মেকিং লাইফ মাল্টিপ্ল্যানেটারি’ নামে পরিচিত ।
পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন থেকে দুই পর্বে ইলন মাস্কের জীবন, সফলতা ও তরুণদের জন্য তার পরামর্ষ তুলে ধরা হচ্ছে ।
প্রথম পর্বে থাকছে ইলন মাস্কের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং তার সাফল্য । আর দ্বিতীয় পর্বে থাকছে সফল হতে হলে তরুণদের জন্য তার অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্ষ । দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ
সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে যে ১০ টি কাজ আপনাকে অবশ্যই করতে হবে | PayPal এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক । ১৯৭১ সালে সাউথ আফ্রিকায় জন্মগ্রাহন করেন । মা ছিলেন একজন মডেল ও বাবা ইঞ্জিনিয়ার ।
ছোট বেলা থেকেই তিনি পাঠ্যবই কম পড়তেন, তবে দিনের ১০ ঘণ্টা সময় ব্যায় করতেন পছন্দের সব বই পড়ে । এই বইগুলোর বেশির ভাগই ছিল পদার্থ এবং অর্থনীতি বিষয়ে । তবে কমিক্সের বই পড়তেও প্রচণ্ড ভালোবাসতেন তিনি । তার ধারণা, জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তিনি, তার পেছনে বিরাট ভুমিকা আছে তার প্রচুর বই পড়ার এই অভ্যাসের । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসময় আমি অন্ধকারকে ভয় পেতাম । কিন্তু যখন বই পড়ে আবিষ্কার করেছি, অন্ধকার হচ্ছে ফোটনের অনুপস্থিতি মাত্র, তখন বুঝলাম অন্ধকারকে আসলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই ।
এভাবেই তিনি বই থেকে অর্জিত জ্ঞান এবং নিজস্ব চিন্তা-চেতনাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করতেন ।
খুব ছোটবেলায় ইলন মাস্কের জীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল । যার প্রভাব ছিল তার পরবর্তী জীবনে । একটি ঘটনা ছিল আনন্দের, অন্যটি কষ্টের অভিজ্ঞতা । ১৯৮৪ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১২ বছর, তখন তিনি ‘ব্লাস্টার’ নামে একটি ভিডিও গেম নির্মাণ করেন । তারপর সেটি কোন একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করেন ৫০০ ডলারে ।
অন্যদিকে কষ্টের ঘটনাটি হল, কয়েকজন বাজে ছেলে তাকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিল । তারপর তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে যায় ।
তার ১৭ বছর বয়সে তিনি সাউথ আফ্রিকা থেকে আমেরিকা পাড়ি জমান । সেখানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের উপর বিএসসি শেষ করেন ।
২৪ বছর বয়সে তিনি অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ও মেটেরিয়ালস সায়েন্স বিষয়ে পিএইচডি করার জন্য স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শুরু করেন । কিন্তু মাত্র দুই দিনের মাথায় তিনি ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চলে আসেন i
আমরা যারা অনলাইন দুনিয়ার খোঁজখবর রাখি তারা জানি, বিশ্বব্যাপী টাকা লেনদেনের সহজ ও সুন্দর উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম বিশ্বস্ত একটি মাধ্যম হচ্ছে পেপ্যাল । সবাই ‘পেপ্যাল’-এর কথা জানলেও এর প্রতিষ্ঠাতা যে ইলন মাস্ক সে সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানি ।
ক্যান হুয়ারি, ম্যাক্স লেভচিন, লিউক নসেক, পিটার থিয়েল এবং ইউ প্যানকে সাথে নিয়ে ১৯৯৮ সালে ‘পেপ্যাল’ প্রতিষ্ঠা করেন ইলন মাস্ক ।
পেপ্যাল সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কিছু তরুণ মিলে যখন পেপ্যাল প্রতিষ্ঠা করি, তখন অনেকেই আমাদের এই সেবাকে মেনে নিতে পারেনি । কিন্তু পরবর্তীতে আমরা যখন তাদেরকে বিষয়টা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলি, তখন ধীরে ধীরে সবাই এই সেবা গ্রহণ করতে থাকে ।
বর্তমানের ইলন মাস্ককে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখলে অন্যায় হবে । তিনি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই নন, তাকে বলা চলে একটি প্রতিষ্ঠান । মহাকাশ নিয়ে তাঁর রকেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসএক্স’ অকল্পনীয়ভাবে এগিয়ে চলছে । তিনি কয়েক বছর আগে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “নাসার আশায় আমি কখনোই বসে থাকবো না । মানবজাতির স্বার্থে আমরা মঙ্গলে বসতি গড়ার সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি ।
কল্পনাপ্রবণ এ মানুষটি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির সমাবর্তনে দেয়া এক বক্তৃতায় বলেন, “আমি চাই তরুণরা ‘কল্পনাপ্রবণ’ হোক । আজ থেকে অনেক বছর আগে ফিরে গেলে হয়তো দেখা যাবে, তখন কেউ প্লেন উড়ানোর কথা চিন্তা করলে তাঁকে হয়তো হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আজ যদি তোমরা আরও বড় কোনো কল্পনাও করো, তবে তেমন কিছুই হবে না।”
৪৫ বছর বয়সী এই বিজনেস ম্যাগনেট ২০১৬ সালে পৃথিবীর সেরা ১০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৮৩ তম ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নেন । বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গের মত তিনিও একজন জনকল্যাণমুখী মানুষ । বিভিন্ন অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন তিনি ।
তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব মহান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা । ইলন মাস্ক নিকোলা টেসলার একটি উক্তি সব সময় মেনে চলেন –
“অর্থ সবার কাছে যেমন গুরুত্ব বহন করে, আমার কাছে অর্থের গুরুত্ব তেমনটি নয় । আমি আমার অর্জিত সমস্ত অর্থ ব্যয় করবো পরবর্তী আবিষ্কারের জন্য, যাতে মানুষের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠে। ”
আগামী পর্বে থাকছে ইলন মাস্কের সফলতার সুত্র এবং তরুণদের জন্য তার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ । আগামীতে আপনি কার সম্পর্কে জানতে চান তা কমেন্ট করে জানান । সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।
Leave a Reply