ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পুরমানু বিজ্ঞানী ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের ছোটবেলা কেটেছে প্রচণ্ড কষ্ট করে । তাঁর বাবা জয়নুল-আবেদিন একজন নৌকার মাঝি এবং মা আশিয়াম্মা একজন গৃহবধূ ছিলেন। খুব গরীব পরিবারের সন্তান আব্দুল কালাম ।
জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি।
পরিবারের দারিদ্র্যতা তার পড়াশুনার পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । তাই খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। বিদ্যালয়ে ছুটির পর তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করে রোজগার করতেন।
প্রচণ্ড স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম । ভালোবাসতেন স্বপ্ন দেখতে, আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ছুটে চলতেন সেই স্বপ্নের পিছুপিছু ।
বাবা বললেন, ‘প্রিয়তমা, পোড়া রুটিই আমার পছন্দ’।
এভাবেই এগিয়ে যেতেন তিনি । স্বপ্ন শুধু নিজে দেখেই থেমে যেতেন না, সেই স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিতেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে । এমনকি মৃত্যুর কিছুক্ষন আগেও সেই স্বপ্নের কথাই বলছিলেন একঝাক শিক্ষার্থীদের সাথে । তারপর ঢলে পড়েছিলেন মৃত্যুর কোলে ।
তার হার না মানা সফলতার গল্প
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান এই পরমাণুবিজ্ঞানী সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন শিক্ষার্থীদের সাথে সময় কাটাতে । তাদের মনে আলো জ্বালাতে চাইতেন তিনি । জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পার করতে হয়েছে তাকে । তাই জীবন থেকে পেয়েছেন অনেক শিক্ষা ।
পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশনের পক্ষ থেকে তেমনি তার নিজের জীবন থেকে নেওয়া একটি গল্প থাকছে আর আপনাদের জন্য ।
“যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাদের জন্য রান্না করতেন। তিনি সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবার তৈরি করতেন। এক রাতে তিনি বাবাকে এক প্লেট সবজি আর একেবারে পুড়ে যাওয়া রুটি খেতে দিলেন।
আমি অপেক্ষা করছিলাম বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখার জন্য। কিন্তু বাবা চুপচাপ রুটিটা খেয়ে নিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন স্কুলে আমার আজকের দিনটা কেমন গেছে।
একটা পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়।
আমার মনে নেই বাবাকে সেদিন আমি কি উত্তর দিয়েছিলাম কিন্তু এটা মনে আছে যে, মা পোড়া রুটি খেতে দেয়ার জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
এর উত্তরে বাবা মা’কে যা বলেছিলেন সেটা আমি কোনদিন ভুলব না। বাবা বললেন, ‘প্রিয়তমা, পোড়া রুটিই আমার পছন্দ’। পরবর্তীতে সেদিন রাতে আমি যখন বাবাকে শুভরাত্রি বলে চুমু খেতে গিয়েছিলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তিনি কি আসলেই পোড়া রুটিটা পছন্দ করেছিলেন কিনা।
এ জীবন বদলানোর সহজ সূত্র । এ পি জে আব্দুল কালাম
বাবা আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোমার মা আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া একটা পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়।
জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি। আমি কোন ক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর সবার মতোই আমিও জন্মদিন এবং বিভিন্ন বার্ষিকীর তারিখ ভুলে যাই।
আমি কোন ক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভালো বলা যায়।
এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে, আমাদের একে অপরের ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে। জীবন খুবই ছোট; প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেই হয় না।
যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।
তার দুঃসময়ের আরেকটি হৃদয়স্পর্শী গল্প
আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন । অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সফল ব্যক্তিদের জীবনী, সফলতার সূত্র এবং জীবনের নানান সমস্যা আপনাদের পাশে আছে পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশন ।
আর আগামী পর্বে আপনি কোন বিষয়ে লেখা চান কমেন্ট করে জানান । ভাল থাকুন ।
সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।
Leave a Reply